Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজউকের অভিযানে আতঙ্কে রাজধানীর বহুতল ভবন মালিকরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৪২ AM
আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৪২ AM

bdmorning Image Preview


একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বহুতল রাজধানীর বহুতল ভবন গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নড়েচড়ে বসেছে সব সংস্থাই। চকবাজারের চুড়িহাট্টার পর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। আত্মরক্ষার্থে বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ হারান অনেকে। মানুষের করুণ মৃত্যু শিহরিত করেছে সবাইকে। বনানীর পর গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের আগুনে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায়। অল্পদিনের ব্যবধানে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত রাজধানীবাসী।

রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একইসঙ্গে যেসব বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ সুবিধা বা সরঞ্জাম নেই সেগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। গত সোমবার এ অভিযান শুরু হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভবন মালিকরা। কারণ রাজধানীর অধিকাংশ ভবন বিল্ডিং কোড, নিয়ম, নকশা না মেনে নির্মাণ করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের জরিপ মতে, রাজধানীর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে ভবন মালিকদের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেয়ার জোর তাগিদও দেয়া হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে। তবে সে তাগিদ বরাবরই উপেক্ষা করে আসছে ভবন মালিকরা।

এবার রাজধানীর বিভিন্ন উচ্চ ভবনের সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে অভিযানে নেমেছে রাজউক। রাজউকের ৮টি জোনের অধীনে ২৪টি টিম ১০ তলার বেশি বহুতল ভবনগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

জোনগুলো হচ্ছে- জোন-১ (আশুলিয়া, ধামসোনা), জোন-২ (উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর), জোন-৩ (সাভার, মিরপুর), জোন-৪ (গুলশান, বনানী, মহাখালী, পূর্বাচল), জোন-৫ (ধানমন্ডি, লালবাগ), জোন-৬ (মতিঝিল, ভুলতা), জোন-৭ (কেরানীগঞ্জ, জুরাইন, সূত্রাপুর, ওয়ারী) এবং জোন-৮ (ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও )। রাজউকের এ অভিযান আগামী ১৫ দিন চলবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রাজউকের এ অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভবন মালিকেরা। তারা মনে করছেন, যেহেতু সব ধরনের নিয়ম মেনে ভবন তৈরি করেননি সেহেতু রাজউকের অভিযানে তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমনকি তাদের ভবনের অংশবিশেষও অপসারণ করা লাগতে পারে। পাশাপাশি ভবনে নানা সুবিধা বাস্তবায়ন করতে আর্থিক ব্যয় বাড়ারও আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

গত ২৮ মার্চ বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে এফআর টাওয়ারে আগ্নিকাণ্ডের পর জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য এফআর টাওয়ারের নকশা রাজউক থেকে অনুমোদন করা হয়। এরপর সেখানে নির্মাণ করা হয় ২৩ তলা। রাউজকের অনুমোদিত নকশা থেকে এ ভবনের নকশায় আরও অনেক বিচ্যুতি ঘটেছে। এফআর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নকশা পেশ করে, যার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নকশার কোনো মিল নেই।

এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা পেছনে যেতে চাই না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার তাই করা হবে। আর কোনো ছাড় নয়। যারা আইন মানছেন না তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। আমরা অভিযান শুরু করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী যেসব বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে শুধু সেসব ভবনের বিরুদ্ধেই অভিযান চলবে। ভবনগুলোতে আগুন নেভানোর নিজস্ব ব্যবস্থা কেমন, মূল সিঁড়ির পাশাপাশি জরুরি বিকল্প সিঁড়ি আছে কি-না, পাম্পের কী অবস্থা, লিফট-ফায়ার লিফট, জেনারেটর কক্ষ ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে কি-না এসব বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে।

এদিকে রাজধানীর সদরঘাট এলাকার ইস্টবেঙ্গল ইনস্টিটিউটশন সুপার মার্কেটসহ ৫৩ ভবনকে অগ্নিনিরাপত্তার জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া ১৭৩ ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সদরঘাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মোস্তফা মোহসিনের নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল ইনস্টিটিউটশন সুপার মার্কেটকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ সংবলিত ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়।

অন্যদিকে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোনো ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে সে বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য ‘অভিযোগ বক্স’ চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। পাশাপাশি ফোন ও হোয়াটস অ্যাপ নম্বরও থাকবে। এসব মাধ্যমে যারা অভিযোগ জানাবেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। যারা ভবনের সমস্যা জানাবেন তাদের পরিচয়ও গোপন রাখা হবে। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কাজ করে সবাইকে নিয়ে নিরাপদ ঢাকা গড়ে তুলব। প্রতিটি আঞ্চলিক অফিসে অভিযোগ বক্স খোলা হবে। একটি ফোন নম্বর চালু করব। সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ সংযোগ থাকবে। আমরা একটি নগর অ্যাপ চালু করার জন্যও কাজ করছি।

এ দৌড়ঝাঁপে ভবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যাবে-এমন ভয়ে আছেন ভবন মালিকরা। একদিকে রাজউকের অভিযান অন্যদিকে ডিএনসিসির উদ্যোগে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।

Bootstrap Image Preview