Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি বিশেষ স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৩০ PM
আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৩০ PM

bdmorning Image Preview


দেশে অটিজম আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেই হারে বাড়েনি বিশেষ স্কুল। এ ধরনের শিশুর অভিভাবকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণেরও কোনো উদ্যোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজম আক্রান্ত শিশুরাও অন্য শিশুর মতো অভিভাবকের ভালোবাসা পেতে চায়, সুরক্ষা পেতে চায়। কিন্তু তারা সেটা প্রকাশ করতে পারে না। অধিকাংশ বাবা-মা বিভ্রান্ততে থাকায় তারা ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেন না, তাদের সন্তানদের নিয়ে কি করবেন। এতে অধিকাংশ অটিজম আক্রান্ত শিশু সঠিক পরিচর্যা পায় না

এর জন্য, অভিভাবকদের অসচেতনতা বড় কারণ বলে মনে করছেন প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদের (পিএনএসপি) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব। তিনি বলেন, অটিজম শিশুদের জন্য দেশে স্বল্পসংখ্যক স্কুল গড়ে উঠলেও, শিশুদের অভিভাবকদের প্রশিক্ষিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। তার অভিযোগ, অধিকাংশ অটিজম স্কুলের অবস্থান শহরে, বিত্তবানদের সন্তানদের জন্য সেগুলো পরিচালিত। প্রান্তিক পর্যায়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী অটিজম শিশুদের জন্য শিক্ষার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সালমা মাহবুব বলেন, ‘সারা দেশে ১০৩টা প্রতিবন্ধী সেবা সাহায্য কেন্দ্রে অটিজম কর্নার থাকলেও সেগুলো কতটুকু কার্যকর তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

চিকিৎসকদের মতে, অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশগত সমস্যা। একটি শিশুর তিন বছরের মধ্যেই এটি প্রকাশ পায়। অটিজম আক্রান্তরা অন্য মানুষ বা বিষয়ের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না বললেই চলে। মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুর অটিজম আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বয়সের তুলনায় পিছিয়ে থাকে। একই ধরনের আচার-আচরণ তারা বারবার করে। অটিজমের অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে বংশগত। এর বাইরে পরিবেশ দূষণ, রাসায়নিক মেশানো খাদ্যগ্রহণ এসবও অটিজমের জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, অটিজম চিকিৎসায় ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন উন্নয়নকর্মী স্বপ্না রেজা। তিনি বলেন, ‘সাধারণত অটিজম আক্রান্ত শিশুরা নিজেদের জগতে থাকে। তারা অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বা নিজেকে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে না। তিনি জানান, অটিজমের ক্ষেত্রে প্রতি তিনজন বাচ্চার জন্য একজন শিক্ষক প্রয়োজন হয়। কোনো ক্ষেত্রে একজন বাচ্চার জন্য একজন শিক্ষক দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে এমনটা ভাবাই যায় না। তবুও অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য কিছু স্কুল আছে। তবে সেগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক।

অটিজম আক্রান্ত শিশুর সঠিক পরিচর্যা না পাওয়ার পেছনে স্বপ্না রেজা অভিভাবকদের অসচেতনতাকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করেন। তিনি বলেন, অনেক অভিভাবক জানেনই না তার সন্তান অটিজমে আক্রান্ত। ফলে অটিজম আক্রান্ত শিশুর সঠিক পরিচর্যা করতে পারেন না তারা।

প্রতিবন্ধী ১২ ক্যাটাগরির এক ক্যাটাগরি হচ্ছে অটিজম। অটিজম আক্রান্তদের নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৪৮ হাজার অটিজমে আক্রান্ত মানুষ (শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক) রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কতজন শিশু সে তথ্য জানা যায়নি। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশের মোট প্রতিবন্ধীর এক শতাংশকে অটিজমের শিকার বলে ধরে নেওয়া হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ অনুযায়ী (২০১৩-২০১৬) দেশে প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ৪১ হাজার ৩২৯।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মসূচি পরিচালক ড. আশ্রফী আহমেদ (উপ সচিব) বলেন, ‘সরকারিভাবে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর অভিভাবকদের প্রশিক্ষণের জন্য এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আমরা সারা দেশে অটিজম আক্রান্তদের তালিকা করছি। এ বছরই অভিভাবকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী অটিজম দিবস পালিত হয়। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার।’

Bootstrap Image Preview