পা আছে, কিন্তু হেঁটে চলার শক্তি নেই। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি। কিন্ত তার রয়েছে অদম্য শিক্ষা শক্তি। হেঁটে চলার শক্তি না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে বাবার কোলে। সহপাঠিদের সাথে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তাকে ঘিরেই ছিলো কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি।
অচল ডান হাত রেখে বাম হাতে দ্রুত গতিতে লিখেই তাক লাগিয়েছে বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাইছ আকতার।
সোমবার (১ এপ্রিল) সকালে বাবা তাকে কোলে তুলে নিয়ে ধুনট সরকারি ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রের ১২১ নম্বর কক্ষে বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে আসেন। পরীক্ষা শেষে আবার তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
ধুনট উপজেলার বহালগাছা গ্রামের নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক। আকতার জাহান গৃহিনী। এই দম্পত্তির ২০০১ সালে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধি নাইছ। নজরুল ইসলাম ও আকতার জাহান দম্পত্তির এই কন্যা শিশু নিজের দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না। শক্তি না থাকায় ডান হাতটিও অচল।
বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবন্ধি হলেও বাবা-মার কোলে চেপে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে নাইছ আকতার। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ থাকায় তাকে বিনাবেতনে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নাইছ আকতার জানায়, বাবা-মায়ের কোলে চড়ে এক সময় রাস্তায় বের হলে মানুষ বিদ্রুপের চোখে তাকিয়ে থাকতো। লেখাপড়া করার কারণে মানুষ এখন তাকে ভালবাসে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে সমাজের সকলের ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করতে চাই।
নাইছ আকতারের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়ে প্রতিবন্ধি হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারণে সব কষ্ট দূর হয়েছে। ভাল ফলাফল নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারলে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় অনেক চিকিৎসা করেও নাইছকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় বাবার কোলে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে নাইছ আকতার। পা থাকলেও হাটতে পারে না। সমাজসেবা অধিদফতরের প্রত্যয়ন অনুযায়ী পরীক্ষায় তাকে প্রতিবন্ধি কোঠায় ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে।