‘মা, মা, ও মা আমি শেষ হয়ে গেলাম মা। মায়ের দোয়ার সব শেষ মা। কিচ্ছু নাই গো মা,আমার কিছু নাই মা’ দোকান পোড়ার কথাগুলো মাকে ফোনে এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে জানাচ্ছিলেন দোকান মালিক জুলহাস মিয়া।
শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে লাগা আগুনে অন্যান্য অনেক দোকানের সঙ্গে পুড়ে গেছে মায়ের দোয়া বুনিয়াদি স্টোর নামে একটি দোকানও।
মার্কেটের ৬৭ নম্বর দোকানটি ছিল তার। মশলার আইটেমসহ পুরো দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে জুলহাসের।
জুলহাস বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। মা-বাবার জমি বিক্রির টাকায় এই দোকান করেছিলাম। ২৫ লাখ টাকার ওপরে মশলার আইটেম ছিল। সবই পুড়ে ছাই।’ বলতে বলতে আবারও হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
একই অবস্থা মার্কেটের পুড়ে যাওয়া প্রায় সব দোকানির। আগুনের এই ঘটনায় ২৯১টি দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিক বলেন, ২০১৭ সালেও একবার এই মার্কেটে আগুন লেগেছিল। এরপর তিন চারবার নোটিস দেওয়া হয় মার্কেট কর্তৃপক্ষকে। তবে এখানে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই মার্কেট কর্তৃপক্ষের।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে আগুন লাগার খরব পেয়ে ৫টা ৫৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করের ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। প্রথমে ৭টি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে ২০টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচা ও সুপার মার্কেটে মূল আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে চারিদিকে অতিরিক্ত ধোয়া ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচতে আশেপাশের দোকানিরা তাদের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি একই মার্কেটে আগুন লেগেছিল। সেই সময় ১৬ ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ঐ সময় মার্কেটের নিচতলা ও দোতলার মোট ৬০৫টি দোকান পুড়ে গিয়েছিল।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বনানীর ২২তলা এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হয়েছেন। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।