Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘কিছুদিন আগে স্ত্রীকে হারালাম, মেয়েটিও আমাকে ছেড়ে চলে গেল’

মহিনুল ইসলাম সুজন, নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৮:৩১ PM
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৮:৩৮ PM

bdmorning Image Preview


নীলফামারীর জলঢাকায় কৈমারী ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) আনুমানিক দেড়টার দিকে ঢাকা বনানী এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জামাই ও মেয়ের মৃত্যু হয়।

জামাই মাকসুদার (৩১) পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার থানার মিজানুর রহমানের ছেলে ও সাত মাসের অন্তঃসত্তা রুমকি বেগম (২৮) নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার ওই ইউনিয়নের আশরাফ আলীর মেয়ে।

তারা দুই জনই ওই টাওয়ারে ট্রোভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিল। নিহত রুমকি তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। পাঁচ মাস আগে রুমকির মা মারা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে নিহতের পরিবারের কাঁন্না ও আর্তনাদের রোল। তাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যায়। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহতের খালু শফিকুল ইসলাম (৪৭) বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে আমার ভাজতির বিয়ে হয়। গত চারদিন আগে মেয়ে জামাই এলাকায় বেড়াতে আসে। আর চারদিন পর তার মৃত্যুর খবর শুনতে হলো।

কথা হয় নিহতের মেজো ভাই ও বিন্যাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আলী রনির সাথে। তিনি কাঁন্নাবিজরিত কন্ঠে বলেন, চলতি মাসের ১৭ তারিখ মোবাইল ফোনে কথা হয় ছোট বোন রুমকির সাথে। সে বলেছিল ঈদুল ফেতরের ছুটিতে বেড়াতে আসবে। এই কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আর কিছুই বলতে পারেনি।

বড় ভাই রফিকুল ইসলাম রকি (৩৫) বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ।

বাবা আশরাফ আলী বুকের ধন মেয়ে ও জামাইকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কিছুদিন আগে স্ত্রী হারানোর বেদনা ভুলতে পারিনি। এর পর মা হারা মেয়েটিও আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমি এতিম হয়ে গেলাম।

রুমকির চাচাতো বোন জয়া বেগম (৪২) বলেন, তার শিক্ষা জীবন ও বিবাহিত জীবন ঢাকায়। সে মাস্টার্স পাশ করে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে (এফ আর টাওয়ারে) স্মামী, স্ত্রী দু'জনে মিলেমিশে চাকরি করে। রুমকি ১০ তালায় আর আমার ভগ্নিপতি ১১ তলায় কর্মরত ছিল। শুনেছি জীবন বাঁচাতে ১১তলা থেকে লাফ দিতে গিয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। আর রুমকি কালো ধোঁয়া ও গ্যাসে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়। সে বিলাপ করে কাঁদছে আর বলছে তাদের ভাগ্যটাই খারাপ।

নিহতের চাচা ও জলঢাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ আলী কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ভাই আশরাফ আলী একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে পাগলের প্রলাপ বকছে। তিনি গতকাল ঢাকায় গিয়ে তার মেয়ের লাস বুঝে নিয়েছে। আর জামাইয়ের বাড়ই যেহেতু ঢাকায়, সে কারণে তার লাস পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চারদিন আগে মেয়ে জামাই বেড়াতে এসছিল। আর আজ বাবার কাঁদে মেয়ের লাস। এটি কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুজাউদৌলা বলেন, নিহতের পরিবারের সাথে সমবেদনা জ্ঞাপন ও জানাজায় অংশগ্রহণ করেছি। জানাজা শেষে তার পারিবারিক কবরস্থানে নিহতের মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত পরিবারগুলোর প্রতি শোক প্রকাশ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য নীলফামারী-৩ মেজর রানা (অবঃ) মোহাম্মদ সোহেল শোকসমাপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।

Bootstrap Image Preview