Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বারবার সতর্কতা নোটিশেও সাবধান হয়নি ভবন কর্তৃপক্ষ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৭:৪০ PM
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৭:৪০ PM

bdmorning Image Preview


বনানীর এফ আর (ফারুক-রূপায়ণ) টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে অনেকে অনেকভাবে দেখছে। ভবনটির ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ম বহির্ভূত নকশা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে এখানে ভবন মালিকদের গাফিলতির প্রমাণ সুস্পষ্ট। এ ছাড়াও রাজউককে দুষছেন অনেকেই।

নিরাপত্তাকর্মী, স্থানীয় লোকজন এবং ভবনটির ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এফ আর টাওয়ারের মালিক মোট ২৪ জন। তারা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ফ্লোরের মালিক।

ভবনটিতে ফ্লোর আছে মোট ২৩টি। প্রতিটি ফ্লোরে জায়গার পরিমাণ ছয় হাজার স্কয়ার ফুট। নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন সাইজের দোকান বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় তলায় রয়েছে একটি কনভেনশন সেন্টার, যার নাম রোজডেল ব্যানকুয়েট হল। এই হলের মালিক এবং নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার দোকানগুলোর মালিক একই ব্যক্তি, তিনি হলেন ভবনের জমির মূল মালিক এস এম এইচ ফারুক।

এ দিকে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা না থাকা কিংবা জরুরি বহির্গমন পথের স্বল্পতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিলো আগেই। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুইবার কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া, ১৮তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে ২৩তলা করার কারণ হিসেবে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিতে পারেনি ভবন কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ডেভেলপার কোম্পানির গাফিলতি ও ভবন পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে দায়ী করছে মালিক কর্তৃপক্ষ।

তবে অনুমোদনের বাইরে উপরের ৫তলা তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে ভবনের ম্যানেজার কামাল বলেন, ১৮তলার অনুমোদন থাকা স্বত্ত্বেও ২৩তলা করার বিষয়ে আমাদের আপত্তি ছিলো। কিন্তু এ ভবন পরিচালনা সোসাইটির সভাপতি তাসবিরুল ইসলাম বলেছেন সমস্যা নেই। তার ইচ্ছাতেই এটি নকশার বাইরে ৫তলা বাড়ানো হয়েছিলো।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে সম্প্রতি পাঠানো চিঠি অনুযায়ী- রাজউকের নির্মাণ সংক্রান্ত বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এফ আর টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এর ওপর অবৈধভাবে অধিক উচ্চতায় ভবন নির্মাণ করার ফলে রাজউক সম্প্রতি একটি নির্দেশনা দেয়। অবিলম্বে অবৈধ উচ্চতা সংশ্লিষ্ট অংশটি অপসারণ করে ভবনটিকে বৈধ উচ্চতায় ফিরিয়ে আনার জন্য রাজউকের নোটিশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ ভবনের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। তিনি ১৯৯৫ সালে ভবনের নকশার জন্য রাজউকে আবেদন করেন। অনুমোদন পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রূপায়ণ গ্রুপকে ভবন বানানোর জন্য জমি দেওয়া হয়।

২০০৫ সালে কাজ শুরু হওয়া ভবনটি চালু হয় ২০০৭ সালে। তখন থেকে ভবনের প্রায় অর্ধেক অংশের মালিকানা ফারুকের, বাকি অর্ধেক রূপায়ণ গ্রুপের।

এ দিকে অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন জানিয়েছেন, ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল না। যেগুলো ছিল সেগুলো ব্যবহারযোগ ছিল না। এমনকি যে পাইপটি আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার হয় সেটিও পুড়ে গেছে। যার ফলে তাৎক্ষণিক ফায়ার ফাইটিং করা সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ভবনটির অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ছিলো। এ বিষয়ে তাদেরকে একাধিকবার নোটিশ করা হলেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেবাশিষ বর্ধন বলেন, এর আগে আমরা এফ আর টাওয়ার ভবনটি একাধিকবার পরিদর্শন করেছিলাম। ভবনের অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটিসহ সেগুলো সমাধানে কিছু সুপারিশও করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে তাদেরকে দুইবার নোটিশ দেওয়ার পরেও ভবন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আজ শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ভবনটির ১৮তলা অনুমোদন ছিলো, কিন্তু এটি কিভাবে ২৩তলা করা হলো। ভবনটির অনুমোদন দেওয়ার সময়ে রাজউক চেয়ারম্যান কে ছিলেন সেটিও খুঁজে দেখা হচ্ছে। এ কাজে যাদেরই অবহেলা রয়েছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ভবন‌টি (এফ আর টাওয়ার) ১৮ তলা থে‌কে ২৩ তলা হ‌য়ে‌ছে। ১৯৯৬ সা‌লের প‌রিকল্পনায় ১৮ তলা হয়ে‌ছে। ২০০৫ সালে রাজউক জান‌তে পা‌রে, ভবন‌টি ২৩ তলা হ‌য়ে‌ছে। এর ম‌ধ্যে ১৪ বছর পে‌রি‌য়ে গে‌ছে। এ সময় রাজউক কী ক‌রে‌ছে?

ক্ষোভ প্রকাশ করে আইজিপি বলেন, গত ১৪ বছরে রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কী করেছে? ভবনটি ১৮ তলা হওয়ার কথা। অথচ হয়েছে ২৩ তলা। সেটাও ১৪ বছর আছে। তাহলে রাজউক এতদিন কী করেছে।

বনানীতর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Bootstrap Image Preview