বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ। শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মঞ্জুর হাসান (৫০) নামক এক পঙ্গু ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। অফিসের সবাই যখন জীবন বাঁচাতে দৌড়ে চলে যাচ্ছিল, তখন তিনি অফিসের চেয়ারে বসে ছিলেন।
মৃত্যুর আগে তার ছোট ভাইকে ফোন করে তিনি বলেন, আমিতো বের হতে পারছি না, পঙ্গু মানুষ। আমি মনে হয় আর বাঁচব না। সবাই অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি কোনো উপায় না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে আছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করিস। তোরা ভালো থাকিস।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে এই কথাগুলো হয় মঞ্জুর হাসানের।
মঞ্জুর হাসানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে। তিনি মৃত মুনছুর রহমানের ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঞ্জুর হাসান ছাত্রজীবন থেকে ঢাকায় থাকতেন। ছাত্রজীবন শেষে চাকরি শুরু করেন। এরপর সংসার। পরিবার নিয়ে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে বসবাস করতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করতেন তিনি।
ঘটনার দিন মঞ্জুর হাসান ভবনের ২১তলায় কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থায় করছিলেন। আগুন থেকে বাঁচতে সবাই যখন ছোটাছুটি করছিলেন তিনি কোনো উপায় না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে ছিলেন। আর জীবনের শেষ সময়টুকু স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।
কিন্তু এক সময় ফোনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বার বার রিং হলেও অপর প্রান্ত থেকে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার সকালে নিহতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের লোকজন মঞ্জুর হাসানের বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। নিহতের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। তবে গত কয়েকদিন থেকে নিহতের ছোট ভাই শিমুল বাড়িতে আছেন। ঘটনার দিন বিকেলে ভাইয়ের মৃত্যুর কথা জানতে পান তিনি।
নিহতের ছোট ভাই শিমুল বলেন, চাকরিরত অবস্থায় ২০০০ সালে অফিসের সামনের রাস্তায় ভাই এক সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান। এরপর থেকে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতেন না। একপ্রকার পঙ্গু জীবন যাপন করতেন। কিন্তু তারপরও কোম্পানি ভাইকে চাকরি থেকে বাদ দেয়নি।
তিনি বলেন, অফিসে যখন আগুন লাগে সবাই বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করছিল। কিন্তু ভাই পঙ্গু হওয়ায় কিছু করার উপায় ছিল না। অফিসে বসেই ফোনে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।