Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বনানীর এফআর টাওয়ারে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৩:৪১ PM
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৩:৪১ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডিমর্নিং


রাজধানীর বনানীতে বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। শুক্রবার দুপুরে উদ্ধার অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ

তিনি বলেন, এফআর টাওয়ারে আর কোনো লাশ নেই। নতুন করে কোনো লাশ আজ পাওয়া যায়নি। আগুন পুরোপুরি নিভে গেছে।

এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশীদ আনোয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, আগুন নেভানোর পর রাত থেকে তল্লাশি করা হয়েছে। তবে সকালে আর কোনো লাশ উদ্ধার হয়নি। ভেতরে প্রতিটি ফ্লোরে তল্লাশি করা হচ্ছে।

ভবনটির সামনে ও পেছনে পুলিশ মোতায়েন করা ছিল দিনভর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগে এফআর টাওয়ারে। ভবনের ৯ম তলায় আগুনের সূত্রপাত। পরে ছড়িয়ে পড়ে ২৩তলা ভবনের বেশ কয়েকটি তলায়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও বিমানবাহিনীর পাঁচটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। ভবনটির ছাদে আটকেপড়া অনেককে উদ্ধার করে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণে হেলিকপ্টার থেকে ভবনটিতে পানিও ফেলা হয়।

ভয়াবহ এই আগুনে ২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের লাশও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আহত অন্তত ৭৩ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতেরা হলেন- মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার রামপাশা গ্রামের সৈয়দ মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সৈয়দা আমিনা ইয়াসমিন (৪৮), বরিশালের বিমানবন্দর থানার উত্তর কড়াপুর গ্রামের মৃত মোতাহার হোসেনের ছেলে মো. মনির হোসের সর্দার (৫২), দিনাজপুরের কোতয়ালী থানার ভালুয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত. আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪০), রংপুরের পীরগঞ্জ থানার চতরা গ্রামের মৃত. আব্দুর রশিদ মুন্সির ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬), খুলনার তেরখাদা থানার কোদলা গ্রামের মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ থানার দক্ষিণ নাগদা গ্রামের নাজমুল হাসানের ছেলে রেজাউল করিম রাজু (৪০), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহাবের মেয়ে জেবুন্নেছা (৩০), টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ভানুয়াবহ গ্রামের ইছাহাক আলীর ছেলে নাহিদুল ইসলাম তুষার (৩৫), বগুড়ার আদমদীঘি থানার সান্তাহার বলিপুর গ্রামের রায়হানুল ইসলামের স্ত্রী তানজিলা মৌলি (২৫)।গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বালুগ্রামের মৃত. নজরুল ইসলাম মৃধার ছেলে পারভেজ সাজ্জাদ (৪৬), কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার বানিয়াপাড়ার ইছহাক আলীর ছেলে ইফতিয়ার হোসেন মিঠু (৩৭), যশোর সদরের বেস্টপাড়ার মোজাহিদুল ইসলামের মেয়ে শেখ জাবিন তাসনিম বৃষ্টি (২৫), শরিয়তপুরের পালং থানার সারেনগা শৈলপাড়া পাড়ার মৃত. আব্দুল কাদির মির্জার ছেলে আতিকুর রহমান (৪২), লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানার কলেজ রোডের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে আনজির সিদ্দিক আবির (২৭), নওগাঁর বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত. মনসুর রহমানের মঞ্জুর হাসান (৪৯), পাবনার আতাইকুলা থানার গাঙ্গহাটি গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে আমির হোসেন রাব্বী (২৯)।

এদিকে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন। তিনি বলেন, ভবনের ভেতরে উদ্ধার কাজ চলছে, সেখানে আরও কিছু মৃতদেহ আছে।

নিহতদের মধ্যে পরিচয় পাওয়া গেছে, শ্রীলংকান নাগরিক নিরস (কুর্মিটোলা হাসপাতাল), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বালুগ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), দিনাজপুর জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আবুল কাশেমের ছেলে মামুন (ইউনাইটেড হাসপাতাল), আমিনা ইয়াসমিন (৪০), আবদুল্লাহ ফারুক (ঢাকা মেডিকেল), মাকসুদুর (৬৬) ও মনির (৫০)।

সন্ধ্যার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে প্রবেশ করেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। এরপরই বের হতে থাকে একের পর লাশ। ইউনাইটেড হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার জানান, সেখানে যে তিনজনের মৃতদেহ রয়েছে, তাদের সবাই পুরুষ। তাদের একজনের মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে, বাকিদের অন্য ইনজুরি ছিল। নিহতদের একজনের নাম মনির।

এদিকে দগ্ধ ও আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭০ জন।

পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আহতের সংখ্যা ৭০। যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- লুৎফুর রহমান ভুঞা (৭৪), কাজী জাবির উদ্দিন (৫৪), ফজলুল হক (৬১), ফজলুল হক (২৮), মির্জা আহসানুল হাবিব (৮১), রিয়াজ মাহমুদ আনসার (৩১), খন্দকার মাঈনউদ্দিন (৪৫), আহসানুল হক মামুন (২৮), মো. মুসফিকুর (৭৪), সুশান্ত (৩৫), বাদল ফয়সার (৩২), সোহাগ (২২), আল-ফয়সাল (৩৫), ফরহানুর রহমান (২৮), ফয়েজ আহমেদ (৪০), হাসান (১৮), রাশেদ (৪২), নূর আলম (১৫), রায়হান (৩০), নজরুল ইসলাম (২৯), বি সরকার (৪১), আবদুস সবুর খান (৪২), রায়হান হোসেন মজুমদার, তাহারিম (২৮), নাজমুল হক (৩৫), মহিউদ্দিন (২৩), নূর হোসেন (২৮), রেজাউল আহমেদ (৪০), ইকবাল (৪০), রেজাউর রহমান রিজন (৪৭), ইউসুফ (১৯), মহিন (৪২), রিপন (৩০), রোমানা (২৬), মাজেদ, আতিকুজ্জামান (২৫), আতিকুল (২৭), মিরাজ (৩৯), মেহেদী নাহিয়ান (৩২), হাসানুজ্জামান (৪২), বাবুল (৩৮), মইনুল রিংকু (৪০), জসিম (২৮), মিঠু (২৫), সাব্বির (২২), রেদোয়ান আহমেদ (৩৫), আবু হোসেন (৩০), আনোয়ারুল ইসলাম (৪০), এটিএম জাহাঙ্গীর (৬৪), সোহরাব হোসেন, পলি, স্মৃতি, স্বর্ণা, নীলিমা মাহমুদ, আবরারুল আলম, মহিউদ্দিন, নাইমুল হোসেন, রেজোয়ান আহমেদ, ফজলুল হক, রিফাত, মশিউর, ফাহিম, মুরাদ, মামুন, ইশতিয়াক, ফজলু, এবিএম আবুল হোসেন, মাহবুব আলম ও রশিদ প্রমুখ।

এছাড়া নিখোঁজদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- মির্জা আতিকুর রহমান, জেবুন্নেসা, আরকে জেবিন বৃষ্টি, রেজাউল করিম রাজু, জসিম উদ্দিন, জাফর আহমেদ, নজরুল ইসলাম, আনজির সিদ্দিক আবির, মোস্তাফিজুর রহমান, হিরু, রেজাউল করিম রাজীব।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ-উন-নবী বলেন, বেশির ভাগেরই শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা।

রশিদ-উন-নবী আরও বলেন, নিহত শ্রীলংকার নাগরিকের নাম নিরস চন্দ্র। অগ্নিকাণ্ডের পর তিনি ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নেয়ার আগেই তিনি মারা যান।

Bootstrap Image Preview