চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েকদিন ধরে চলছে আবহাওয়ার খাম-খেয়ালিপনা। সূর্য উঠার সাথে সাথে বেশ গরম আবহাওয়া দিয়ে দিনের শুরু হচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে রোদের তেজ ও গরম। আবার সন্ধ্যা হতে-না-হতেই বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ।
আবহাওয়ার এই খাম-খেয়ালিপনায় (তারতম্য) রোগজীবাণু বাসা বাঁধছে শিশু বয়ষ্কদের মাঝে। জ্বর, সর্দি কাশি, গলাব্যথা, ভাইরাল ফিভার নিয়ে শিশু ও বয়স্কদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ঠাণ্ডা গরমের তারতম্যে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসব রোগীদরে ভীড় বেড়েই চলেছে।
গত ৩ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ শতাধিক শিশু ও বয়ষ্করোগী। এছাড়া প্রায় ৫ শতাধিক রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা ও চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। হটাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তার ও সেবিকারা।
চিকিৎসকরা জানান, তাপমাত্রার এই তারতম্য জীবাণুকূলের জন্য আদর্শ সময়। ফুসফুসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। যে কারণে কখনো কখনো হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ক'দিন আগেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা তেমন লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু গত তিনদিনে ৪ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়ষ্করা। এ সময় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিনে ঠাণ্ডাজনিতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শুধু বহির্বিভাগে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ চিকিৎসা নিয়েছে ৫ শতাধিক রোগী। এই তিন দিনে ভর্তি হয়েছে ৪ শতাধিক রোগী।
সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রায় সবাই আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের দুই মেডিসিন ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। শিশু ওয়ার্ডেরও একই অবস্থা। চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও সেবিকারা।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ নাসরিন বেগম জানান, তিনদিন আগে তার ছয় বছর বয়সী মেয়েটির বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরদিন থেকে জ্বর। গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে মেয়ের অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় তিনি বড় ডাক্তার দেখাতে আজ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: শামিম কবির বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে সাধারণ জ্বর ও ঠাণ্ডাজনিত রোগের উপদ্রপ হঠাৎ করে বেড়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু ও বয়ষ্ক। শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এই সময়টায় খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
ডা: শামিম কবিরের পরামর্শ, আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময় নাকেমুখে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নিয়মমাফিক ভিটামিনযুক্ত খাবার, পরিমাণমতো পানি পান ও পূর্ণ বিশ্রাম নিলে এমনিতেই এসব রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে। এ সময় বেশি করে আদা ও লেবুর চা খেতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে কাশির সিরাপ বা অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়াই উত্তম। সকাল-বিকেল কুসুম গরম পানিতে গড়গড়া করতে হবে। অনেক সময় ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা কাশি থেকেই সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, দিনে গরম রাতে ঠাণ্ডা আবার কখনো বৃষ্টি- এই আবহাওয়ায় শিশুদের সর্দি কাশি লাগার একটা প্রবণতা থাকে। এই সময় মায়েদেরকে একটু সতর্ক ও শিশুদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। মায়েরা একটু সতর্ক ও শিশুদের প্রতি যত্নবান হলেই আবহাওয়া পরিবর্তনের এসব রোগ থেকে শিশুকে মুক্ত রাখা সম্ভব।