Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ সোমবার, মে ২০২৪ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলা: ফারুকের অপেক্ষায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৯, ১২:১৪ PM
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯, ১২:১৪ PM

bdmorning Image Preview


নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল-নূর মসজিদে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত নারায়ণগঞ্জের ওমর ফারুকের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে।  যে দুটি মসজিদে বন্দুকধারীরা হামলার চালায় তার একটিতে জুমার নামাজ পড়েন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ওমর ফারুক (৩৫)। ঘটনার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে নিউজিল্যান্ডে যোগাযোগ করে লাশ শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভগ্নিপতি সারোয়ার হোসেনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন।

এদিকে ওমর ফারুকের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সানজিদা জামান নিহা। নিহার সঙ্গে ফারুকের বিয়ে হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিয়ের কিছু দিন পর ফারুক ভাগ্যবদলাতে নিউজিল্যান্ড চলে যান। গত বছরের ১৬ নভেম্বর ছুটিতে দেশে আসেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ফের কর্মস্থলে চলে যান। নিহা বর্তমানে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন নিহা।

সানজিদা জামান নিহা জানান, ওমর ফারুকের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫১ মিনিটে (নিউজিল্যান্ড সময় শুক্রবার সকাল ৮টায়)। এর পর থেকে তার ফোন বন্ধ। নিহা জানান, তার স্বামী বেঁচে আছেন কিনা তা তিনি এখনও নিশ্চিত নন। কারণ সরকারিভাবে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।

ওমর ফারুকের লাশ দ্রুত ফিরিয়ে আনাসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন পরিবারের স্বজনরা। তাদের দাবী, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিটিকে হারিয়ে সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইলো না।

নিহত ওমর ফারুকের ভগ্নিপতি সারোয়ার হোসেনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকার বাবা হারা তিন বোনের একমাত্র ভাইটি পরিবারটিকে টিকিয়ে রাখতে ভালো উপার্জনের আশায় ২০১৫ সালে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। সেখানে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে কাজ করতেন ওমর ফারুক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাড়িতে ছুটিতে আসার পর একই এলাকার সানজিদা জামান নিহার সাথে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর আবার নিউজিল্যান্ড চলে যান ওমর ফারুক। গত ১৬ নভেম্বর ছুটি নিয়ে আবারো দেশে আসেন। কিছুদিন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে ১৮ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড ফিরে যান তিনি। স্ত্রী সানজিদা জামান নিহার বর্তমানে ৩ মাসের অন্তঃসত্তা। স্ত্রীর সাথে তার শেষ কথা হয় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫১ মিনিট আর নিউজিল্যান্ড সময় শুক্রবার সকাল ৮টার সময়। এরপর ওমর ফারুকের সাথে পরিবারের আর কোন যোগাযোগ হয়নি।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুরে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ আল-নূর মসজিদে জুম্মার নামাজের সময় এক বন্দুকধারীর এলাপাতাড়ি গুলিতে ৪৯ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ থাকেন ওমর ফারুক। আবার কারো কারো মাধ্যমে জানতে পারেন ওমর ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তবে নিশ্চিত করে কেউই ওমর ফারুকের কোন খবর জানাতে না পারায় হতাশায় পড়ে যান পরিবারের স্বজনরা। শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে আরো দুই বাংলাদেশীর লাশ শনাক্ত হওয়ার খবর জানতে পেরে তিনি যোগাযোগ করেন নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসে। সেখান থেকেই তাকে নিশ্চিত করা হয় ওমর ফারুকের নিহত হওয়ার বিষয়টি।

মোশারফ হোসেন আরো জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসে ওমর ফারুকের পাসপোর্ট কপি পাঠানোর পরই তাকে সেখান থেকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এবং মানসিক প্রস্তুতি নিতেও বলা হয় তাকে।

শনিবার রাতে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ ওমর ফারুকের লাশ শনাক্ত হওয়ার খবরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পরিবারের স্বজনরা। একমাত্র ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটি মেনে নিতে পারছেন না শোকাহত তিনবোন। তার এখনো দাবি করছেন, তাদের ভাই জীবিত আছে এবং ফিরে আসবে কোন একদিন। আর ছেলে হারানোর শোকে পাথর হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন মা রহিমা বেগম। খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে নিকট আত্মীয়-স্বজনরা তাদের স্বান্তনা দিতে ছুটে আসতে থাকেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকায় ওমর ফারুকের বাড়িতে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ওমর ফারুক নিহত হওয়ার খবর শুনে একদিকে শোক, অন্যদিকে হতাশায় পড়েন পরিবারের স্বজনরা। সরকারের কাছে তারা দ্রুত দেশে লাশ ফিরিয়ে আনাসহ পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে নিহত ওমর ফারুকের মা বিলাপ করতে করতে বলতে থাকেন, “আমার ছেলেক ফেরত চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার জিজ্ঞাসা, আমার ছোট মেয়ের বিয়ে কে দেবে ? কে আমাদের সংসার চালাবে? আমাদের সবার কি হবে? ” এক কথায়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কুল কিনারা হারিয়ে ফেলেছেন সন্তানহারা এই বৃদ্ধা মা।

নিকট আত্মীয় স্বজনরা হামলাকারী ও হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই পারেন এই পরিবারটির দায়িত্ব নিয়ে তাদের সবাইকে রক্ষা করতে। এছাড়া এই পরিবারটির আর কোন উপায় নেই।

Bootstrap Image Preview