আমন্ত্রণ পেয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরসহ নেতৃবৃন্দরা।
শনিবার বেলা ২টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আসতে শুরু করেন ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি বাসে তারা গণভবনে পৌঁছান।
সবার শেষে বেলা ৩টার দিকে একটি প্রাইভেটকারে গণভবনে পৌঁছান ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। ওই গাড়িতে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেনও ছিলেন।
বিকালে প্রথম তাদের বার্গার কেক ও পানি দেওয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর গণভবনের সবুজ লনে বুফে ডিনারের আয়োজন ছিল। নৈশভোজে যাকসু নেতাদের বিরানি, খাসী, জালি কাবাব দেওয়া হয়। এছাড়ার ফিল মিষ্টি ফিরনি ও কোমল পানীয়। গণভবনে যাওয়া একাধিক ডাকসুদের নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ডাকসু নেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ হয়, এটা সবসময় বলেছি। ছাত্রছাত্রীরা যা চাইবে, তাই হবে। ভোট কে কত পেল, সেটা বড় না। যারা জয়লাভ করেছে সবার কিন্তু এই বিবেচনা রাখতে হবে কে ভোট দিল কে দিল না সেটা বিষয় নয়।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠান মঞ্চে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব খুঁজছি। সেটা ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হলে ভালো। আমরা স্কুলজীবন থেকেই শুরু করেছি যেন ছোটবেলা থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা থাকুক।
ডাকসুর নির্বাচিত নেতাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহস থাকা ভালো, তবে আন্দোলনে সুযোগসন্ধানীরা থাকে, তাদের ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে ছাত্রনেতাদের।
এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আগুন দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সেসময় ছাত্রী হলগুলোতে অস্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারিনি। যখন জেনেছি ছাত্রীরা নিরাপদে হলে ফিরে গেছে, তখন বিশ্রামে গিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ভিপি নুর বলেন, ‘আমি আড়াই বছর বয়সে মাকে হারাই। ছোটবেলায় আমার একজন স্কুল শিক্ষিকার মাঝে মায়ের ছায়া দেখতে পেয়েছি। আর একজনের মধ্যে আমি মাতৃত্বকে খুঁজে পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর মাঝে আমি মাতৃত্বের ছায়া খুঁজে পেয়েছি।’
শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব ও উন্নয়নকাজ বিশ্বে তাকে প্রশংসনীয় অবস্থানে নিয়েছে উল্লেখ করে ভিপি নুর ডাকসু কার্যকরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
এর আগে বক্তব্য রাখেন ডাকসু সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই চায়ের অনুষ্ঠানে ডাকসুর নেতৃত্ব ছাড়াও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষক নেতারা।
এর আগে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চায়ের দাওয়াতে আমরা সবাই অবশ্যই যাবো। এটা তো আর ব্যক্তিগত দাওয়াত নয়। ডাকসু ও হল সংসদে যারা জয়ী তাদের সবাইকে তিনি ডেকেছেন। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের সবারই প্রধানমন্ত্রী।’
প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডাকসুর ২৫ পদের মধ্যে ২৩ পদে জয়ী হন ছাত্রলীগের নেতারা। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন কেবল নুর ও আকতার।