Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সিগারেটের দাম বাড়ে কেন?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৯, ০৫:২৩ PM
আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯, ০৫:২৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


প্রত্যেক বাজেটের আগের একমাস সিগারেট বা তামাক পণ্যের দাম বেড়ে যায়৷ তামাক নিয়ন্ত্রণজনিত আইনের সহায়তা নিয়ে মুনাফাভোগীরা ‘স্টক' করে শলাকার পর শলাকা৷ তারপর মোটামুটি মানের প্রতিটি সিগারেট বিক্রি করা শুরু করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা বেশি দামে৷ প্রতিবেদনটি ডয়েচে ভেলের একটি ব্লগ থেকে নেয়া।

ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো প্রায় সাড়ে ২০ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার সিগারেট বিক্রি করে, যা আগের বছর ছিল ১৬ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকার৷ অর্থাৎ বিক্রি হওয়া প্রতি সিগারেটের দাম যদি গড়ে ৩ টাকা ধরি, তাহলে কম-বেশি ৬ হাজার কোটি সিগারেট বিক্রি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি৷ সেই হিসেবে মাসে বিক্রি করে ৫০০ কোটি সিগারেট৷ ৫০ পয়সা করে প্রতি সিগারেটে বাড়তি দাম ধরলে, দুইশ' বা আড়াইশ' কোটি টাকার কোন হদিসই থাকে না! এটাই তো ‘কালো টাকা', তাই না!

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘কালো টাকা' মানে হচ্ছে অপ্রদর্শিত আয়; সেটা অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থও হতে পারে, আবার বৈধ পথে৷ কেবল সেই টাকার ওপর কর দেওয়া হয় না, এই যা৷ সিগারেট বিক্রির উদাহরণ টানলাম এ কারণে যে, আইনের ফাঁকফোকড় এবং শাসন বা বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে কালো টাকা তৈরি খুব সহজ হয়ে যায়৷

প্রতি বছর চোখে পড়ে সিগারেটের স্টকের বিষয়টি৷ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও দাম বৃদ্ধিতে আইনের অজুহাতে কিছু করে না, আবার এলাকার দোকানদাররাও সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাম বেশি রাখেন৷ প্রতিবছরই মনে হয়, সারা বছর ধরে যেসব কোম্পানি দুর্দান্তভাবে মার্কেট চেইন ঠিক রাখে, 

এইরকম ছোট ছোট অনিয়ম ও ছাড় বিপুল অঙ্কের কালো টাকা যেভাবে তৈরি হয়

জমি বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য৷ দেশে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা আসে নাকি জমি বিক্রি থেকেই৷ এটা যে অবৈধ পথে আসে সবসময়, তা নয়৷ ধরা যাক, কোথাও আপনার দাদার একখণ্ড জমি ছিল৷ দিন দিন জমির দাম বেড়েই চলেছে৷ এ অবস্থায় আপনি জমি বিক্রি করলেন ২০ বছর পর অনেক দামে৷ কিন্তু দেশের ভূমি আইনে এলাকাভিত্তিতে জমির দাম নির্ধারণ করা আছে৷ আপনি তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে দেখালেন আইন অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করেছেন৷ এই যে বাড়তি টাকা আসবে, সেটাই অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা৷

তবে ইদানীং কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থের মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা টানার দাবি উঠেছে৷ তাঁদের মতে, অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস বৈধ হতে পারে, আবার অবৈধও হতে পারে৷ কিন্ত কালো টাকার উৎস নিশ্চিতভাবেই অবৈধ৷ তাই বৈধ অপ্রদর্শিত অর্থের সঙ্গে কালো টাকাকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়৷

বাজেট এলেই সাধারণত আলোচনায় আসে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বিষয়টি৷ ১৯৭৫ সালে সামরিক সরকার এক ফরমান জারির মাধ্যমে দেশে প্রথম কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়৷তারপর থেকে এ সুযোগ বিভিন্নভাবে দেওয়া হচ্ছে৷

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা প্রতিবছর বিষয়টি নিয়ে আপত্তিও তোলেন৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়৷ এর মানে হলো, অপ্রদর্শিত অর্থ মূল অর্থনীতিতে নিয়ে আসা৷      

বিদেশে অর্থপাচার বন্ধে ও দেশে বিনিয়োগ অক্ষুন্ন রাখতে ২০১৮-১৯ সালের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া৷ জরিমানার বিধান রেখেই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি৷

তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ‘কালো টাকা' সাদা করার কথা বলা হয়, তা রয়ে যায় অসফলই৷ ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের চেয়ে এক হাজার কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছিল৷ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা থেকে দাঁড়িয়েছিল সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকায়৷  

মূলধারায় কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে হলে এর পথগুলো কঠিন করতে হবে৷ দুর্নীতির ছোট ছোট রাস্তাগুলো বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই৷ ভূমি বিক্রির আইনের মতো ফাঁকফোকড়গুলো বন্ধ করতে হবে৷ সিগারেটের ফাটকা মূল্য বৃদ্ধির মতো আপাত ছোট কালোটাকার উৎসগুলো কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে বড় জায়গায় হাত দিতে হবে৷ অবশ্য সার্বিক অবস্থায় তা খুব দূরে বলেই মনে হয়৷

Bootstrap Image Preview