Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ডাকসুতে প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্চিত হওয়া সেই দিপ্তি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৬:১৯ PM
আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৬:১৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন শ্রবণা শফিক দীপ্তি। নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র জোট’ থেকে স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন শ্রবণা শফিক দীপ্তি।

দীপ্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে দীপ্তি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে পরিচিতি লাভ করেছেন। ২০১৮ সালে সাত কলেজের অধিভুক্তি আন্দোলনে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

দীপ্তি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার বাবা মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চু। তার চাচা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস ও বর্তমান সাংসদ সাইফুজ্জামান শেখর।

দীপ্তির ফুফু কামরুন লায়লা জলি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ছিলেন। দিপ্তীর মামা মাগুরা পৌরসভার মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল। ৫ বার এমপি ছিলেন তার দাদা আসাদুজ্জামান। নানা ছিলেন মাগুরা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক। এবারের ডাকসু নির্বাচনে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দীপ্তি।

ডাকসুর প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই দেখেছি নিজের স্বার্থের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে অপরাজনীতির ব্যবসা করছে অনেকে। এটা খুবই খারাপ লাগে। যাতে সত্যিকার অর্থেই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কাজ করতে পারি- এ কারণেই প্রার্থী হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছি। ক্যাম্পাসে এসে সবসময় ছাত্র অধিকারে কাজ করেছি। এজন্যে নির্যাতনের মুখেও পড়তে হয়েছে। আমি চাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক। সে লক্ষ্যে আমি ডাকসুতে প্রার্থী হয়েছি। শিক্ষার্থীদের অধিকারে আমি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে কাজ করে যাবো।

নির্বাচিত হলে কী করবেন- এমনটা জানতে চাইলে তিনি তার নিজের ও জোটের পক্ষে ছয় দফা তুলে ধরেন।

তার দেয়া ছয় দফা হলো-

১। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকদের সমন্বয়ে একটি সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি। এই মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র নিয়মিতভাবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনী হবে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবে। আমাদের ইতিহাসবিষয়ক যেকোনো রকম তথ্য বিকৃতি এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অনলাইন ও অফলাইনে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

এই গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকদের জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা বৃত্তি’ চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি এই গবেষণা কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শহীদ ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল শহীদ পরিবারের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ডেটাবেইজ তৈরি করে তাদের দেখভালের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সুপারিশ করবে।

২। ‘স্বতন্ত্র জোট’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করার জন্য স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মুজিবনগর দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রভৃতি জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিতর্ক, কুইজ, নাটক ইত্যাদি বহুমূখী প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায় যেমন ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি টিএসসিতে একটি স্থায়ী মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার করে প্রতিমাসে দেয়ালপত্রিকা, পেপারকাটিং, ইনফোগ্রাফিকের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।

৩। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম, মৃত্যু এবং জীবনের সকল বিখ্যাত তারিখে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে অনলাইন কন্টেন্ট তৈরি করা এবং ডিবেট, নাটক, বঙ্গবন্ধুর কাছে চিঠি আহ্বান, স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করার অঙ্গীকার করছে ‘স্বতন্ত্র জোট’।

৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরের গণহত্যার যত নিদর্শন রয়েছে সবগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এর বাইরেও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা ও সংরক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হবে।

৫। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে প্রতি মাসে দুই ঘন্টার একটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সেমিনারের ব্যবস্থা করা হবে।

৬। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারী, আদিবাসী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অবিস্মরণীয়। অথচ, জাতি হিসাবে আমরা এখনো তাদের বিষয়ে সচেতন ও যত্নশীল নই। ‘স্বতন্ত্র জোট’ তাদের অবদানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে সাথে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে নিয়মিতভাবে বিশেষ প্রকাশনা, ডকুমেন্টারি, অনলাইন কন্টেন্ট তৈরি করার অঙ্গীকার করছে।

Bootstrap Image Preview