Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শপথের পর বহিষ্কার; সুলতান মনসুরের এমপি পদ নিয়ে কি বলছে সংবিধান?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৫:৪৭ PM
আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৬:২৭ PM

bdmorning Image Preview


দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে একাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী গণফোরাম নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর সংসদ সচিবালয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন তিনি।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাকে দল গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকালে গণফোরামের সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতান মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা জানান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু।

তিনি জানান, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আদর্শবিরোধী কাজ করায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। সেইসঙ্গে তার দলীয় প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হল।

এ দিকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করায় সুলতান মনসুরের সংসদ সদস্য পদটি টিকবে কিনা- এই প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। সুলতান মনসুর শপথ নিলেও সংসদ সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন কিনা এ নিয়ে দেখা দিয়েছে পরস্পর বিরোধী মত।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- কোনো সংসদ সদস্য যদি তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন (ফ্লোর ক্রসিং) অথবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ নির্বাচিত হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে যদি শপথ না করেন তবে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে।

তবে কোনো সংসদ সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে তার সংসদ সদস্যপদ যাবে না। তবে এ ব্যাপারে সংবিধানে সুনির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ নেই।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচিত হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে কেউ শপথ না নিলে তার সদস্যপদ বাতিল হবে। তাছাড়া সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিলেও তার সদস্যপদ থাকবে না। এ ছাড়া কোনো সংসদ সদস্য যদি তার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেন এবং দল যদি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি আটকে যাবেন। অর্থাৎ তাদের সদস্যপদ থাকবে না। সেক্ষেত্রে গণফোরামের নির্বাচিত দুইজন শপথ নিলেও দল না চাইলে তাদের সদস্যপদ থাকবে না।

আবার সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনের পর এমপি পদে থাকার অযোগ্য হবেন কি না, কিংবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো সাংসদের আসন শূন্য হবে কি না—এ সম্পর্কিত কোনো বিতর্ক দেখা দিলে বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের নিকট পাঠানো হবে এবং এ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, সুলতান মনসুর দল থেকে পদত্যাগ করেননি। সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার বিষয়টি তো আরও পরের কথা। তবে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিলে এবং ওই অবস্থায় দল তাঁকে বহিষ্কার করলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।এই যুক্তিতে সুলতান মনসুরের সংসদ সদস্যপদ টিকে যেতে পারে।

অতীতেও এমন দুটি ঘটনা ঘটেছে।নবম সংসদের শেষের দিকে জাতীয় পার্টি থেকে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদে তাঁর সদস্যপদ স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে বহাল ছিল।

এর আগে অষ্টম সংসদের (২০০১-২০০৬) শেষের দিকে ক্ষমতাসীন বিএনপি থেকে রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ আবু হেনাকে বহিষ্কার করা হয়। সে ক্ষেত্রেও তাঁর সদস্যপদ বহাল ছিল। দুটি ক্ষেত্রেই সংসদের ব্যাখ্যা ছিল, দল তাঁদের বহিষ্কার করেছে কিন্তু তাঁরা দল থেকে পদত্যাগ করেননি। যে কারণে তাঁদের সদস্যপদ বহাল ছিল।

Bootstrap Image Preview