Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘কিছু টাকা হইছে, তারই গরম এগুলা’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৪:৪৭ PM
আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৪:৪৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম হিরো আলমকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে হাজির করেন। শুনানি শেষে বিচারক শাহরিয়ার তারিক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

হিরো আলমকে গ্রেফতারের খবরে তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের পলিবাড়ী গ্রামে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গ্রামের মানুষ তার উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন।

হিরো আলমের ব্যাপারে পলিবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা হালিমা খাতুন বলেন, হামাকেরে গ্রামত একটা শয়তান তৈরি হচে। বিটিছোল লিয়া লাচালাচি আর ঢলাঢলি করে হিরো তৈরি হচে। আবার বউওক মারধর করে। ছোট তিনটা ছোলের কতাও ভাবলো না। ইংকা শয়তানের বিচার হওয়া লাগবি।

আব্দুর রউফ পাটোয়ারি নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, একটা মানুষ কতোটা নিচে নামতে পারে তা হিরো আলমকে না দেখলে বোঝা যাবে না। কিছু টাকা হইছে, তারই গরম এগুলা। গ্রামে অনেকেই জানে তার চরিত্রের দোষের কথা। এখনতো তার বউই সব ফাঁস করে দিছে।

এরুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মন্ডল বলেন, হিরো আলমের বাড়ির লোকজন আমার কাছে এসেছিল পুলিশের কাছে তাকে ছাড়িয়ে নিতে তদবির করার জন্য। আমি পারব না বলে জানিয়ে দিয়েছে। একটা বদমাইশ ছেলের জন্য গ্রামের দুর্নাম হচ্ছে। ওর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে হিরো আলমের শ্বশুর সাইফুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলায় বাদী সাইফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তার মেয়ে সাদিয়া বেগম সুমিকে (২৮) ১১ বছর আগে বগুড়া সদরের এরুলিয়া পলিবাড়ী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের পালিত ছেলে আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের সঙ্গে বিয়ে দেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই হিরো আলম তার স্ত্রীর কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। মেয়ের সুখের কথা বিবেচনা করে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর হিরো আলমকে তিনি এক লাখ টাকা দেন। আরও এক লাখ টাকার জন্য হিরো আলম তার স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর ও নির্যাতন করতেন। গত ৫ মার্চ (সোমবার) হিরো আলম যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী সুমি বেগমকে বেদম মারধর করেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্ত্রী সাদিয়া বেগম সুমি অভিযোগ করেন, শুনেছেন হিরো ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এ কারণ তিনি স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ রাখেন না এবং সংসারের খরচ দেন না। এ প্রসঙ্গে কথা বললেই তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।

এছাড়া রাতে বিছানায় শুয়ে হিরো আলম অন্য নারীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন বলে অভিযোগ করেছেন সুমি।

এ ঘটনায় সুমির বাবা সাইফুল ইসলাম বুধবার দুপুরে সদর থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে ওইদিন রাত সোয়া ১০টার দিকে হিরো আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, শ্বশুরের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে হিরো আলমকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হিরো আলম নিজেই থানায় আসেন। স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জেরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারধর করেছে এমন অভিযোগ করেন।

তবে তার অভিযোগের কোনো সত্যতা মেলেনি। পরে তার শ্বশুরের দায়ের করা মামলায় থানাতেই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

অন্যদিকে, হিরো আলমের অভিযোগ, স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে শ্বশুর সাইফুল ইসলাম ও স্ত্রী সাদিয়া বেগম সুমির নেতৃত্বে ৪-৫ জন তার ওপর চড়াও হয়ে কাঠের বাটাম দিয়ে মারপিট করেন। পরে তিনি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে তিনি বুধবার সকালে বগুড়া সদর থানায় স্ত্রী, শ্বশুরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তার বাড়িতে গিয়ে হামলা, মারপিট ও টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

Bootstrap Image Preview