Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২১ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফিলিপাইন তরুণীকে বিয়ে করে ‘প্রতারণা’ বাংলাদেশি যুবকের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০১৯, ১১:২৪ AM
আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯, ০১:৫৮ PM

bdmorning Image Preview


প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফিলিপাইনের এক তরুণীকে বিয়ে করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশি এক যুবকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

আর বিষয়টি নিয়ে মুনতাসির মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে ফিলিপাইনের তরুণী এইমির সাথে কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

যেখানে এইমি অভিযোগ করে বলেন, সালমান ইসলাম নামের এক যুবক তাকে মিথ্যা বলে বিয়ে করে এবং তার থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে এসে জানতে পারেন সালমান বিবাহিত। ওই তরুণীর অভিযোগ, সবকিছু ছেড়ে বাংলাদেশে আসার পরও সালমান এখন তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

মুনতাসির মাহমুদে আইডি থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে প্রতারণার পুরো এই বিষয়টির বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এক বিদেশি মেয়ে নির্যাতিত হয়ে দুই মাস ধরে বাংলাদেশে অসহায় হয়ে ঘুরছে, কেউ তার পাশে নাই। আমি শত চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারছি না। বিশ্বের অনেক দেশেই বাংলাদেশি শুনলে গালি দেয়, অপমান করে, পাত্তা দেয় না।

কারণ অল্প কিছু অমানুষ, যারা বিদেশে গিয়ে সহজ-সরল, সুন্দরী মেয়েদের পটিয়ে বিয়ে করে স্বার্থের জন্যে, এমনকি বাচ্চা জন্ম দিয়ে সেই বাচ্চা আর বউ ফেলে পালিয়ে আসে। এদের জন্যে পুরো পৃথিবীতে আমরা গালি খাই। আমি লিডারশিপ ট্রেনিং প্রোগ্রামে ফিলিপাইন গিয়ে দেখেছি, ওরা হলো পৃথিবীর অন্যতম ভদ্র এবং পরোপকারী জাতি। কিন্তু নিজের চোখে দেখে এসেছি, সেখানেও বাংলাদেশিদের নির্লজ্জতা!’

মাহমুদ লিখেছেন, ‘আমি তিনদিন আগে একটা ভিডিও পোস্ট করেছি। মেয়েটার নাম এইমি। ফিলিপাইনের নাগরিক। এক বাংলাদেশি তাকে মিথ্যা বলে বিয়ে করে। তার আরো একটা বউ ছিল, তার বাচ্চা হচ্ছিলো না, এসব গোপন করে মূলত বাচ্চা নেওয়ার জন্যে আর ফিলিপাইনে বিজনেস করার ধান্দায় সে মেয়েটাকে বিয়ে করে।

গত বছর এইমি তার জব, ফ্যামিলি সব ছেড়ে বাংলাদেশে আসে সালমানের সাথে থাকার জন্য। কিন্ত এসে দেখে তার আরো গার্লফ্রেন্ড আছে, রিলেশন আছে, বউ তো আছেই। এসবের প্রতিবাদ করায় সালমান মেয়েটার গায়ে হাত তুলে, তার অন্য গার্লফ্রেন্ড এর সামনেই পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। তারপর ১০দিন একটা হোটেলে আটকে রাখে।’

এতকিছুর পর সালমানের কোম্পানির বসের মধ্যস্ততায় এইমি আর সালমান একসাথে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা ডিভোর্স নেবে, সেখানে দু’জনেই সাক্ষর করে। মেয়েটা খ্রিস্টান থেকে মুসলিম হয়েছে, মোহরানা ছিল মাত্র দুই লাখ টাকা। এছাড়াও ছেলেটা অনেক সময়েই এইমি থেকে টাকা ধার নেয়, বিমান ভাড়াসহ সবকিছু সব সময় মেয়েটাই দিত। স্বামী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেনি সালমান, উল্টো টাকা ধার নিয়েছে যখন-তখন, সেগুলোও ফেরত দেয়নি।

ছেলেটাকে সময় দেয়া হয় পাঁচ মাস। এবার যখন এইমি বাংলাদেশে আসে, সালমান তাকে হুমকি দিতে থাকে। এমনকি সে চেষ্টা করেছিলো এইমির ভিসা ক্যানসেল করতে, যাতে ও আর বাংলাদেশেই না আসতে পারে। এয়ারপোর্টে আরেক ফিলিপিনোর সাথে পরিচয় হওয়ায় এইমি ওই পরিবারে বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্ত চরম আতঙ্কে আছে, নিরাপত্তা নেই। বাইরেও বের হতে ভয় পাচ্ছে। বাংলাও জানে না, তাই সেভাবে কিছু করতেও পারছে না।

এই ঘটনা নিয়ে এইমি ‘সাস ডেইলি গ্লোবাল’ গ্রুপে পোস্ট করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এটা দেখে, এভাবেই দেশের মান-ইজ্জত সব জায়গায় ধ্বংস হচ্ছে। আমি ঘটনার সত্যতা জানতে অভিযুক্ত সালমান, তার আগের বউ, ভাই-বোন সবার সাথে কথা বলেছি, তারাও সব স্বীকার করেছে। কিন্ত সালমান আমাকে পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। অথচ আমি তার ছবি বা পরিচয় কিছুই ফাঁস করি নাই, যাতে সে এমনিতেই সমাধান করে, সু্যোগ দিয়েছি।

এদিকে আমি ভিডিও করেও লাভ হয়নি কারণ মানুষ ভালো জিনিষ ভাইরাল করে না। আমার এক পয়সা লাভ নাই এখানে। বরং এই কয়টা দিন পুরোটা সময়, শ্রম আর টাকা ব্যয় করেছি যাতে বাংলাদেশী শব্দটা গালি হিসেবে ব্যবহৃত না হয়। ‘Nas Daily’ আমার প্রিয় আর ফিলিপাইনের মানুষ কত ভালো সেটা আমি জানি, এসব জায়গাতেও দেশের এই অপমান সহ্য হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষ। কি দোষ মেয়েটার? এইমি এভাবে আমার দেশে এসে নির্যাতিত হবে কেন?

এ বিষয়ে ‘Nas Daily Global’ নামে জনপ্রিয় একটি ফেসবুক গ্রুপে অনুসন্ধান করে এইমির একটি পোষ্ট দেখা যায়। সেখানে ‘amiee grace’ নামের আইডি থেকে ফিলিপাইনের তরুণী গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি পোষ্ট করে।

সেখানে তিনি দাবি করেন, পাঁচ বছর পূর্বে অনলাইনে তাদের পরিচয় হয় এবং ছয় মাস তাদের মধ্যে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরে তাদের দেখা হয় এবং সেই তরুণ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমদিকে রাজি না হলেও পরবর্তীতে তারা গোপনে বিয়ে করেন। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করে দেখা করে তারা। এমনকি একসাথে বাংলাদেশেও আসে এইমি। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পরিবার, বন্ধু, চাকরিসহ সব ছেড়ে বাংলাদেশে এসে তিনি জানতে পারেন সেই তরুণ বিবাহিত।

তার এই পোষ্ট এবং মুনতাসির মাহমুদ আইডির পোষ্টে কমেন্টে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীর শাস্তি দাবি করেছে সবাই। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এইমি ও সালমান ইসলাম নামের ওই তরুণ-তরুণীকে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

Bootstrap Image Preview