Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আসছেন ‘তথ্য আপা’, প্রযুক্তির কল্যানে দ্রুত এগিয়ে যাবে গ্রামের নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০১৯, ০১:৫৬ PM
আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯, ০১:৫৬ PM

bdmorning Image Preview


সুবিধা বঞ্চিত নারী আর গ্রামে থাকবে না। তথ্যপ্রযুক্তির অবারিত দুয়ার খুলে যাওয়ায় ওসব নারী প্রবেশ করবে তথ্য আলোকবর্তিকায়। প্রযুক্তির কল্যানে জীবনমান উন্নয়নে দ্রুত এগিয়ে যাবে তারা। এমন মসৃণ পথে চলার প্রস্তুতি নিয়েছেন ‘তথ্য আপা’।

'তথ্য আপারা' এখন প্রতিটি উপজেলায় গিয়ে জনপ্রশাসনের সঙ্গে কাজ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন। পরিচিত হচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সঙ্গে। তথ্য আপাদের চিনে নিতে কষ্ট হবে না। পরনে থাকবে নক্সি করা সাদা বর্ডারে বেগুনি রঙের এ্যাপ্রোন।সাথে থাকবে ল্যাপটপ ও ব্যাকপ্যাক। আনুষঙ্গিক জিনিস নিয়ে সাইকেলে চেপে পৌঁছবে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠানে।

প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মীনা পারভীন জানালেন, সরকারের ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি পর্ব শেষ হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় এ বছর এপ্রিলেই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

তিনি জানান, উপজেলাগুলোতে অফিস নেয়া হয়েছে। এগুলো হবে কেন্দ্র। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে তথ্য সেবা কর্মকর্তা ও দুজন করে তথ্য সেবা সহকারী থাকবে। তাদের সংখ্যা হবে ১৪৭০। ৯০ শতাংশের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। তাদের উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। তথ্য সেবা কর্মকর্তা দশম গ্রেডের, উচ্চশিক্ষিত। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

দেশে প্রথম পর্যায়ে ১৩ উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের সফল্যের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশের সব উপজেলায় ‘তথ্য আপা’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক মীনা পারভীন জানালেন দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও নতুন বিষয় যোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় কর্মসূচী ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)। ই-কমার্স, ই-লার্নিং, ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) টেলিভিশন, অনলাইন অফলাইন সব সুবিধা তো থাকছেই। তথ্য ভান্ডারে আছে কৃষি স্বাস্থ্য শিক্ষা জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি (লিঙ্গ সমতা), ব্যবসা বিষয়ক কয়েকটি বিষয়ে প্রযুক্তির বাতায়ন। আইপি টেলিভিশনে মহিলা বিষয়ক সংবাদের সঙ্গে প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। এ থেকে একের দেখাদেখি অন্যরা অনুপ্রাণিত হতে পারে।

ই-কমার্সের মাধ্যমে গ্রামীণ নারী হস্তশিল্প প্রসারে সহযোগিতা তো পাবেই একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতের সব তথ্য পাওয়া যাবে। যেমন গ্রামীণ নারী বাংলার ঐতিহ্য নক্সিকাঁথা বুননের পর তা নিজেরা বিপণন করতে পারে না। অল্প পারিশ্রমিকে এসব পণ্য কিনে নিয়ে যায় মধ্যস্বত্বভোগী এনজিও। ই-কমার্সে জ্ঞান দিলে নিজেরাই উৎপাদিত পণ্য বিপণনের পথ খুঁজে পাবে। ই-লার্নিং নারীর প্রযুক্তিজ্ঞানের সব দুয়ার খুলে দেবে তারা। পরে তারা প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দল গঠন করতে পারবে।

'তথ্য আপা' ঘরের দুয়ারে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রাথমিক পরীক্ষা বিনামূল্যে করে দেবেন। যেমন রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন মাপা, অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মদানে নিরাপদ ব্যবস্থা সবই জানিয়ে দেবেন। নারীর রোগবালাই দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। যেসব পরীক্ষা প্রকল্পের কর্মসূচীর সফটওয়্যারে করা সম্ভব তাও করে দেবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।

কিভাবে আন্তঃজালের (ইন্টারনেট) মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায় তাও দেখিয়ে দেয়া হবে। এর বাইরে স্কাইপি, ভাইবার, ইমো ব্যবহারে কিভাবে দ্রুত দেশে ও দেশের বাইরে যোগাযোগ করা যায় সে বিষয়েও অভিজ্ঞ করে তোলা হবে। গ্রামের নারী আর অবহেলিত হয়ে আর পিছিয়ে থাকবে না।

মীনা পারভীন জানান, ’২০২২ সালের মধ্যে গ্রামের এক কোটি নারীকে প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত করে দেয়া হবে। ওয়েব পোর্টাল, ইন্টারনেট প্রটোকল তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। সব অনুষ্ঠান নির্মিত হবে নারীকে কেন্দ্র করে। যেখানে ভিডিও ও স্থিরচিত্রের একটি আর্কাইভ থাকবে। সার্ভার ও সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লাইভ বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের সহায়তা পাবেন নারী। বর্তমানে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সর্বজনীন। সেলফোনের এ্যাপলিকশনের মাধ্যমেও তারা সেবা নিতে পারবে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৫ কোটি টাকা। ৫ বছর পর প্রকল্পের সব কর্মসূচীর সফলতার ওপর ভিত্তি করে সরকারের এই প্রকল্প মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে। ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী ভাবনা, চলছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। এই প্রকল্পের সাফল্য জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে লিঙ্গ সমতা, নারী উন্নয়নের যে কথা বলা হয়েছে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে।

Bootstrap Image Preview