Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

 কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ: গণভোট নাকি গণহত্যা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০১৯, ১২:০৯ PM
আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯, ১২:১১ PM

bdmorning Image Preview


কাশ্মীরের নিয়ে পাক-ভারত উত্তেজনা বহুদিনের, কিন্তু কাশ্মীরিরা চায় স্বাধীনতা। আর পাক-ভারতের টানাটানির কাছে কাশ্মিরের স্বাধীনতার স্বপ্নটা সব সময় মাটি চাপা পড়ে যায়। কাশ্মীরের বাসিন্দারা মুসলিম হওয়ায় পাকিস্তান তাদের কাছে কিছুটা প্রিয়, যদিও তারা পাকিস্তানের অধিন হতে চায় না। 

অপরদিকে কাশ্মীরিরা ভারতকে একেবারেই পছন্দ করে না কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার লোভের কারণে তাদেরকে ভারতের শাসন মেনে নিতে হয়। আর যখনই তারা স্বাধীনতা চায় তখনই তাদের উপর নেমে আসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর র্নিমম অত্যাচার। কাশ্মিরিরা কোনভাবেই ভারতীয় আধিপত্য মেনে নিতে চায় না। কিন্তু এখানে বিদ্রোহ মানেই ‘জঙ্গি’। বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ হিসেবে ‘জঙ্গি’ তকমাটা ভারত ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। কাশ্মীরে কিছু ঘটলেই পাকিস্তানকে টেনে আনাটা খুবই লাভজনক, তাতে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার স্বপ্নটা চাপা দেওয়া যায়।

এ দিকে ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু করে কাশ্মীর কখনো স্থির থাকেনি। ‘জঙ্গি’ তকমা আর পাকিস্তানি ইন্ধনের অযুহাত কাশ্মীরিদের স্বাধীনতাকে বিলম্বিত করলেও ভারত কখনো স্বস্তি পায়নি। বিগত বছরগুলোতে কাশ্মীরের অস্থিরতা আরও বেড়েছে, সেই সাথে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই স্বাধীনতাকামীদের হত্যা করেও বিদ্রোহীদের মনোবল দমানো যায়নি, আরও বেড়েছে। অতি সম্প্রতি সশস্ত্র কাশ্মীরি বা স্বাধীনতাকামীদের পক্ষ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের হামলা এবং এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪৪ জনের মৃত্যু কাশ্মীরিদের শক্তি এবং মনোবল সম্পর্কে ভারতকে ভাবাচ্ছে।

ওপর দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেছেন। বিমান হামলার মাধ্যমে ৩০০ ‘জঙ্গি’ হত্যার দাবি নিয়ে মোদি ভারতকে বেশ ভালোভাবেই নাড়া দিয়েছিলেন, এই ‘সফলতা’কে পুঁজি করে সারা ভারত চষে বেড়াবার পরিকল্পনা করার সময়েই দুইটি মিগ বিধ্বস্ত এবং একজন পাইলট আটকের খবরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়।

আগামী নির্বাচন উপলক্ষে জনগণকে পক্ষে আনার এটাই উত্তম সুযোগও হিসেবে ঢিল ছুড়ে ছিলেন বটে। তাই নরেন্দ্র মোদি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেছেন। বিমান হামলার মাধ্যমে ৩০০ ‘জঙ্গি’ হত্যার এক আজগুবি দাবি নিয়ে মোদি ভারতকে বেশ ভালোভাবেই নাড়া দিয়েছিলেন, এই ‘সফলতা’কে পুঁজি করে সারা ভারত চষে বেড়াবার পরিকল্পনা করার সময়েই দুইটি মিগ বিধ্বস্ত এবং একজন পাইলট আটকের খবরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়।

এই পরিস্থিতিতে পাক ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছে অনেকেই। দুটি দেশের হাতেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এবং অস্ত্র কী করতে পারে সে সম্পর্কে সবাই অবগত আছেন। আর পারমাণবিক অস্ত্রের কারণেই দেশ দুটি বড় ধরনের যুদ্ধে জড়াতে হয়তো চাইবে না। কিন্তু যুদ্ধের সম্ভাবনা একেবারেই ফেলে দেয়া যাবে না।

আপাত দৃষ্টিতে ভারত পাকিস্তানের উপর ঐভাবে হামলা করবে না। কারণ ভারত এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক ডক্টোরিন ভিন্ন। ভারতের পারমাণবিক ডক্টোরিন হলো, তারা আগে থেকে আক্রান্ত না হলে তারা পারমাণবিক হামলা চালাবে না। আর পাকিস্তানের ডক্টোরিন হলো, অন্য কেউ আক্রমণের আগেই তারা পারমাণবিক আক্রমণ করবে।

কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ভারত কিভাবে কাশ্মীরকে ডিল করবে তার উপর। ভারতের সাম্প্রদায়িক এবং বিভেদের রাজনীতি কাশ্মিরিদেরকে ইতোমধ্যেই ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘কাশ্মীর বিস্ফোরণ’কে কেন্দ্র করে ভারত জুড়ে কাশ্মীরিদেরকে এমনভাবে ট্রিট করা হয়েছে তাতে কাশ্মীরিরা ভাবতে বাধ্য হবে যে তারা ভারতের নাগরিক নয়। হিন্দু অধ্যুষিত ভারতীয়দের মনোভাবে মনে হয় তারাও কাশ্মীরিদেরকে ভারতের নাগরিক মনে করেনা। কাশ্মীরিদের প্রতি ভারতের রাজনীতি এবং জনগণের মনভাবের পরিবর্তন না হলে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকে ঠেকানোর সম্ভাবনা খুব কম।

কাশ্মীরের মুসলমানদেরকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে এথনিক ক্লিনজিংও হতে পারে। অথবা পলিটিকাল মাইগ্রেশনের মাধ্যমেও কাশ্মীরি মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হতে পারে। অতীতে অনেক দেশই বিদ্রোহ দমনের জন্য এই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারতের রাজনীতিক এবং থিংকট্যাংক এটা খুব ভালো করেই জানে। ভারত কাশ্মীরকে কীভাবে ডিল করবে এইটা তাদের উপর নির্ভর করছে। তারা সদাশয় হয়ে জাতিসংঘের অধিনে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মিরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দ্বায়িত্ব তাদের হাতেই ন্যাস্ত করতে পারে। কিন্তু এই ধরনের পরিপক্ব এবং ইতিবাচক রাজনীতি ভারতের কাছ থেকে আশা করা যায় না।

ভারত যে কোন উপায়ে কাশ্মীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। কাশ্মীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কাশ্মীরিদের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে কাশ্মীরে প্যালেট গান ব্যবহৃত হচ্ছে। ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল ভারতকে সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এর অনেক অর্থ হতে পারে।

কাশ্মীরি মুসলমানদেরকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে এথনিক ক্লিনজিংও হতে পারে। অথবা পলিটিকাল মাইগ্রেশনের মাধ্যমেও কাশ্মীরি মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হতে পারে। অতীতে অনেক দেশই বিদ্রোহ দমনের জন্য এই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতি মায়ানমারের দিকে তাকালে আমার যুক্তিগুলোর প্রমাণ পাওয়া যাবে। আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ভারত মায়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে। তবে যাই করা হোক না কেন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকে আটকে রাখা যাবে না।

Bootstrap Image Preview