Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অন্ধ মহিদুলের সংসার চলে গাছ পরিস্কার করে

সৌরভ অধিকারী শুভ, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০১৯, ০৩:৪৮ PM
আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯, ০৩:৪৮ PM

bdmorning Image Preview


মাত্র ৩ বছর বয়সে চক্ষু রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে অন্ধ হন মহিদুল। সে সময় কোন মতে পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন তার পরিবার। কিন্তু, মহিদুলের পরিবার মহিদুলের দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে সামর্থ্য হয়নি। পরবর্তীতে বহু চেষ্টা করেও অর্থে অভাবের কাছে হার মেনে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি মহিদুলের পরিবার।

ফলশ্রুতিতে চিরতরে অন্ধত্ব বরণ করতে হয় তাকে। এভাবে দুটি চোখ সম্পূণরুপে অন্ধ হয়ে সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হতে হয় মহিদুলকে। এভাবে শৈশব পেরিয়ে কৈশরে পদার্পণ করে মহিদুল। এক পর্যায়ে মায়ের মৃত্যু হয়। পরে তার বাবাকেও বরণ করতে হয় পঙ্গুত্ব। পরিবারের এমন দুর্দিন এলে একেবারেই দিশেহারা হয়ে পরে মহিদুল।

নিজের দেখভালের জন্য এক গরিব মেয়েকে বিয়ে করেন মহিদুল। কোন পৈত্রিক সম্পত্তি না থাকায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে নিজ এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করে সে। ভিক্ষার আয় দিয়ে কোন রকমে সংসার চলার মধ্যেই তার সংসারে আসে নতুন অতিথি। এখন সে ১ ছেলে ১ মেয়ে সহ ৫ জনের সংসার।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করাটা আর ভালভাবে নিতে পারেনা মহিদুল। মহিদুলভাবে ঘৃণ্য এই ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে বাদ দিয়ে কোন কাজ করে সংসার চালাতে হবে তাকে। কিন্তু অন্ধ হওয়ায় কেউ তেমন কোন কাজও দেয়না তাকে। তারপরেও সে সংসারের অভাব অনটনকে দূর করার জন্য জীবনের ঝুকি নিয়ে বেঁছে নেয় গাছ পরিস্কারের কাজ।

গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছ পরিস্কার করা শুরু করে সে। গাছ প্রতি ৫০ টাকা নিয়ে দিনে ৫ থেকে ৬টি গাছ পরিস্কার করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা উপার্জন হয় তার। এ দিয়েই চলছে অন্ধ মহিদুলের সংসার।

মহিদুল বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের লফিজ প্রামাণিকের ছেলে। অন্ধ মহিদুল সাংবাদিকদের জানান, তার স্ত্রী হাত ধরে নিয়ে গাছের গোড়ায় গিয়ে পৌঁছে দেন তাকে। কাঁধে দা রেখে একটু চাপ দিয়ে ধরে তিনি উঠতে থাকেন গাছে, আর গাছে উঠতে গিয়ে হাত ও পায়ের সঙ্গে কোনকিছু বাজলেই মনে করেন এটা গাছের শাখা প্রশাখা, তখনই সেটা কেঁটে ফেলেন আর এভাবে সে গাছ পরিস্কার করে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মহিদুল ভিক্ষা বৃত্তিকে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ঘৃণা করে শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে স্ব-চেষ্টায় কর্ম করে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা সমাজে এক অনন্য নজির বলে এলাকাবাসি মনে করেন। অন্ধত্ব বরণ করেও ভিক্ষার ঝুলিকে কাঁধে না নিয়ে নিজের কর্মে মনোনিবেশ করে নিজের তথা পরিবারের আয়ের উৎস হিসাবে কাজকেই প্রতিষ্ঠিত করার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। অবশ্য তার এই কাজে আরো উৎসাহ দেয়ার জন্য ওয়ার্ড মেম্বার হেলাল উদ্দিন ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। 

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ওবাইদুল হক জানান, আগামিতে তাকে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।


 

Bootstrap Image Preview