Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৮ বুধবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লালমনিরহাটে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়, চলছে ক্ষমতার দাপট

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০১৯, ০২:৫৬ PM
আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯, ০২:৫৬ PM

bdmorning Image Preview


লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় ব্যাঙ্গের ছাতা মত যতযত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) বিক্রির হিড়িক পড়েছে। কৃষকদের অভাবের সুযোগে এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরির কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে কৃষি জমি গুলোর উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে।

মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। তাই এসব মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুনরায় ফিরে আসতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। আর বারবার তা খোঁড়া হলে এসব জমি ফসল উৎপাদনে স্থায়ীভাবে একেবারে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে। যে কারণে কৃষক কাঙ্খিত ফসল পাচ্ছেন না।

জমির মালিকদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে মাটি কেটে নিচ্ছে ইটভাটার মালিকরা। কৃষি বিভাগের অবহেলা ও কৃষকদের অসচেতনতার কারণে এভাবে আবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হলেও এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের অফিসে জেলার ৫ উপজেলায় ৪৭টি ইটভাটার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ৩৭টির লাইসেন্স থাকলেও চলতি অর্থবছরে হালনাগাদ কাগজপত্র রয়েছে ১৬টি ইটভাটার। একটি বন্ধ রয়েছে। ১০টি ইটভাটার কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। এছাড়া হাইকোর্টে মামলা থাকায় লাইসেন্সধারী ১৪টি এবং লাইসেন্স নেই এমন চারটিসহ মোট ১৮টি ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে বাস্তবে ইটভাটার সংখ্যা অনেক বেশি।

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় ব্যাঙ্গের ছাতা মত যতযত্র গড়ে উঠেছে ১৭টি ইটভাটা। ইট ভাটা তৈরিতে কোনো নিয়মই মানছে না মালিকরা। অধিকাংশ ইটভাটার বৈধ কাগজ পত্র নেই। চলছে শুধু ক্ষমতার দাপটে। হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব সারডুবী ও সিঙ্গিমারী গ্রামের লোকজন ইটভাটা নির্মাণ বন্ধে জন্য বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করে উল্টো বিপাকে পড়েছে।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল এলাকার মেসার্স এস এ ব্রিকসের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম চলতি অর্থবছরে ইট পোড়ানোর অনুমতি না পেলেও তার ইটভাটায় পুরোদমে আবাদি জমির 'টপ সয়েল' কেটে চলছে ইট তৈরির কাজ। এতে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের কোনও নজরদারি নেই।

ভাটার মালিকদের ঘোষণা মতে, কাঁচামাল হিসেবে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক বালু ব্যবহার করার কথা রয়েছে। কিন্তু এসব ইটভাটা আবাদি জমির ওপর হওয়ায় বালু ব্যবহার না করে আবাদি জমির মাটি দিয়েই ইট তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া জমির মাটি ট্রলিতে (ট্রাক্টর) পরিবহন করার কারণে স্থানীয় রাস্তা ও ব্রীজে নষ্ট হচ্ছে।

এ নিয়ে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আমিরুজ্জামান জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠিও দিয়েছেন। ওই চিঠিতে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি জেলা সড়ক থেকে ভেলাবাড়ি জিসি সড়ক ঘেঁষে আবাদি জমি থেকে মাটি কাটা এবং ট্রলিতে মাটি বহন বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা জোর করে কারও জমির মাটি কিনছি না। কৃষকরাই নিজেরা মাটি বিক্রি করছেন।

তিনি জানান, পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি না পাওয়ায় চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট করেছি। এই রিট পিটিশনের বলেই আমার ইটভাটা চলছে।

অপরদিকে, হাতীবান্ধা উপজেলার মেসার্স জেএস ব্রিকসের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আহমেদ আলী বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদফতরের লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অন্যদের মতো আমরাও হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছি। সেই রিট পিটিশনের বলেই আমাদের ভাটায় ইট তৈরির কাজ চলছে।

টপ সয়েল কাটার বিষয়ে জমির মালিক আব্দুল হামিদ বলেন, কৃষি বিভাগের সঙ্গে এবিষয়ে কোনও পরামর্শ করা হয়নি। জমির উপরের মাটি কেটে নেওয়ায় জমিতে ভালো ফসল পাবো না, বিষয়টি জানা ছিল না। কৃষি অফিসারও বলেনি।

তিনি জানান, এবার আমার ২৪ শতক জমির মাটি চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তারা (ইট ভাটা মালিক) জমির দুই ফুট মাটি কেটে নিয়ে যাবে।

জানতে চাইলে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায় বলেন, ইটভাটার সবকিছু দেখভাল করে থাকে জেলা প্রশাসন। আবাদি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উবরা শক্তি যেমন কমে যাবে তেমনি কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন হবে না। কৃষক তার জমির মাটি বিক্রি করে দিলে আমাদের করার কিছু নেই।

তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, জেলার পাঁচজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইটভাটার কারণে ক্ষয়ক্ষতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য পেলে সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Bootstrap Image Preview