Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাকিস্তানে হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা ভারতের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০১৯, ০১:২১ PM
আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯, ০১:২১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে প্রথমবারের মতো ভারতের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে বলে, যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের মদত দেওয়ার অপতৎপরতা বন্ধ না করবে, ততদিন ভারত সে দেশের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসে হামলা চালিয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চলমান উত্তেজনা নিরসনে দুই দেশের মধ্যে আবারও সংলাপ শুরুর আহ্বান জানালেও ভারতের পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা আলোচনায় রাজি। 

কাশ্মিরে জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদের হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ সদস্যের প্রাণহানির পর মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে। পরদিন বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাশাপাশি পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলমান থাকা অবস্থাতেই বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরাসরি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোন করে আলোচনার প্রস্তাব দিতে সম্মত, যদি ভারত সংলাপে রাজি থাকে। তবে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী জঙ্গি মদত বন্ধ না করলে পাকিস্তানে হামলা অব্যাহত থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতের ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের’ গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় বাহিনীটির অন্তত ৪০ জন সদস্য প্রাণ হারান। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে। মঙ্গলবার সেই জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটি ধ্বংসের কথা বলেই ৭১-পরবর্তী ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের আকাশসীমায় ঢুকে বিমান হামলা চালায় ভারত। ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পাকিস্তান ভারতে হামলাকারী জঙ্গিদের মদত দিয়ে যাচ্ছে। এবারের হামলার পর তারা দাবি করেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গর্ভেই জইশ-ই-মোহাম্মদের জন্ম। তবে পাকিস্তান জঙ্গি মদতের অভিযোগ স্বীকার করে না।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এস এস মহল শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, 'এই উত্তেজনা পাকিস্তানের সৃষ্টি। কিন্তু ভারত শত্রুপক্ষের যেকোনও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত ছিলো।' তিনি বলেন, কারিগরি সহায়তাদানকারী বাহিনী সেখানে উপস্থিত ছিল, সেনারা প্রস্তুত ছিল যেকোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায়।

সংবাদ সম্মেলনে নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল দলবির সিং গুজরাল দাবি করেন, পাকিস্তান সমুদ্রসীমা দিয়ে কোনও আগ্রাসন চালাতে গেলেও তারা চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রস্তুত ছিলেন। ‘আমরা পাকিস্তানে যেকোনও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত এবং ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও প্রস্তুত। আমরা আমাদের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।'

বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কাপুর বলেন, আমরা আমাদের টার্গটে হামলা চালিয়েছি। কিন্তু হতাহতের সংখ্যা এখনই বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আজাদ কাশ্মিরে হামলার প্রমাণ কীভাবে প্রকাশ করা হবে এটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যাপার।

চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশকে সংযত আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বনেতারা। দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে থেমে থাকা সংলাপ আবারও শুরু করার তাগিদ দিয়েছে তারা। ২৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। উভয়ের সঙ্গে আলোচনাকালেই তিনি উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন। এর আগে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাং এক বিবৃতিতে বলেন, চীন চায় ভারত-পাকিস্তান পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখুক। এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স প্রস্তাব দিয়েছেন যেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান আজহার মাহমুদকে কালো তালিকাভুক্ত করে। তবে চীন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের তাগিদ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

Bootstrap Image Preview