Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২১ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী প্রমির মৃত্যুর দায় কার?

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:২০ PM
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:২০ PM

bdmorning Image Preview


স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মেমোশা আক্তার প্রমি (১১) নামের পঞ্চম শ্রেণির এক মেধাবী স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া মেধাবী ক্ষুদে স্কুলছাত্রীর এমন অকালমৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় এলাকাবাসী ছাড়াও জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা জুড়ে গত কয়েকদিন ধরেই নানামুখী প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও সমবেদনা প্রকাশের পাশাপাশী বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রমির এ অকাল মৃত্যুর দায় নেবে কে? কিংবা এ মৃত্যুর দায় কার? এমন প্রশ্ন তুলে এর সুষ্টু ও নিরপেক্ষ তদন্তের বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী নেটিজেনরা, এমনকি নানা শ্রেণি পেশার লোকজন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. শাফায়েত আলম বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বলেন, এ ঘটনায় আমরা মর্মামত হয়েছি। শ্রীঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি গঠনের পর তদন্ত সাপেক্ষে এ ছাত্রীর আত্বহত্যার পেছনে যদি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা অন্য কোন শিক্ষকেরও কোন ধরণের প্ররোচনার প্রভাব পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সিলেট বিভাগের উপ পরিচালক, মো. শাফায়েত আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুনামগঞ্জ, মো. জিল্লুর রহমান সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাহিরপুর মো. আকিকুর রেজা খাঁন, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম রাব্বীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে সরজমিনে তদন্ত করার পর নিহত স্কুলছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনায় অভিভাবকদের সমবেদনা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে উপজেলার ব্রাম্মণগাঁও (নোয়াপাড়া) গ্রামের বাড়িতে ওই স্কুল ছাত্রীর লাশ পারিবারীক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সোমবার বিকেলে নিজ বাড়ির শোবার ঘর থেকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।

স্টুডেন্ট কাউন্সল নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় সহপাঠিদের অপমান সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করছে এলাকাবাসী। 
এ অকাল মুত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পাশাপাশী সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ মৃত্যুর দায় নেবে কে? আসলে এ অকালমৃত্যুর দায় কার?

ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় বাধ্য করা হয়েছে বলে তদন্ত সাপেক্ষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রানালয়, আইনশৃংলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি জোরালো দাবি তুলে ধরে শোকাহত এলাকাবাসী।

নিহতের পরিবার এবং সহপাঠিদের সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিপত্র অনুযায়ী সারা দেশে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন করতে ২০ ফ্রেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ নির্ধারিত করে দেয়া হল। কিন্তু বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাষ্ট্রীয় শোক দিবসে (২৫ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। তিনটি শ্রেণিতে ১৭ প্রার্থীর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী স্কুলছাত্রী মেমোশা আক্তার প্রার্থী হন। তার প্রার্থীতার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকের কোনো সম্মতি নেয়নি বলে জানা গেছে।

২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহন শুরু হলে বিকেল ৪টার দিকে ঘোষিত ফলাফলে মেমোশা আক্তার প্রাপ্ত ভোটে তৃতীয় হয়ে পরাজিত হন।

এদিকে ভোটে পরাজিত হলে স্কুলেই কয়েকজন সহপাঠি মেমোশাকে ‘ফেইল ফেইল’ বলে অপমানসূচক নানা কথাবার্তা বললে কান্নারত অবস্থায় দ্রত বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় মোমেশা।

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর মেয়ে খাবার টেবিলে না ফেরায় শোবার ঘরের দরজা খুলে পরিবারের সদস্যরা দেখেন আদরের মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। মোমেশার দেহ উদ্ধার করে দ্রত বাদাঘাট বাজারে নিয়ে গেলে স্থানীয় চিকিৎসক ওইদিন সন্ধায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত মা বলেন, ‘পরাজয় আঁচ করতে পেরে সোমবার সকাল থেকেই মেয়ে আমার স্কুলে যেতে চায়নি। এরপর প্রধান শিক্ষক স্কুলের অপর তিন ছাত্রীকে বাসায় পাঠিয়ে আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে স্কুলে ডেকে নিয়ে যান।

উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে মোমেশার দাফন শেষে মঙ্গলবার তার বাবা মোশাহিদ শাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি কিংবা আমার স্ত্রীর কোন রকম সম্মতি ছাড়াই প্রধান শিক্ষক চাপ প্রয়োগ করে আমার মেয়েকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধ্য করেন। তারা নির্বাচনের নামে আমার মেধাবী কন্যাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলেন।’

উপজেলার বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান হাবিবের নিকট ওই বিষযে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমেকে বলেন, ‘ আমি আসলে বুঝতেই পারিনি নির্বাচনে হেরে গিয়ে এমন একটি কোমলমতি ছাত্রী আত্মহত্যা করে ফেলবে।

শিক্ষা অদিপ্তরের পরিপত্র ও রাষ্ট্রীয় শোক দিবস (২৫ ফেব্রুয়ারি) উপেক্ষা করে নিজের মনগড়া তারিখে ভোট গ্রহনের তারিখ নির্ধারণ বিষয়ে প্রশ্নে তিনি কোনোরকম উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।

বৃহস্পতিবার তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকিকুর রেজা খাঁন বলেন, ‘ওই স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা ও পুরো বিষয়টি আমি আমার উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে জানানোর পর বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের উপ পরিচালক মহোদয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সরজমিনে প্রাথমিক তদন্ত করে গেছেন এ ব্যাপারে শীঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এরপর পরবর্তীতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়াও হবে।

Bootstrap Image Preview