Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্কুল-কোচিং আর পড়ার চাপে বাড়ি ছাড়ল ৩ শিশু

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩০ PM
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


অতিরিক্ত পড়ার চাপে বাড়ি ছাড়ল তিন শিক্ষার্থী। নেত্রকোনা শহরে ঘটেছে এমন ঘটনা। একদিনের ব্যবধানে ১১ দিন বয়সী শিশুসহ স্কুলপড়ুয়া চার শিশু নিখোঁজের ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপহরণের ঘটনা হিসেবে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে সন্তানদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কে রয়েছেন বাবা-মা।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে ১১ দিন বয়সী নিখোঁজ এক শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায় ওই শিশুটি অপহরণ হয়নি।

নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ১১ দিন বয়সী শিশুটি অপহরণ হয়নি। শিশুর বাবা কাশেম ও খালা ঝর্ণার যোগসাজশে লুকিয়ে রেখে থানায় জিডি করা হয়। অথচ তারা ঢাকায় জান্নাতুল বেগম নামের এক আত্মীয়ের কাছে শিশুটিকে পাঠিয়ে দেন।

ওসি আরও বলেন, শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের তৎপরতা দেখে নিজেদের ভেতরে ভীতি সৃষ্টি হলে শিশুকে ব্যাগভর্তি করে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে রেখে যেতে আসেন তারা। এ সময় শিশুর বাবা কাশেম, খালা ঝর্ণা ও সহযোগী শিউলী আক্তারকে আটক করা হয়। সেই সঙ্গে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে বুধবার মধ্যরাতে নিখোঁজ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সামিউল আলম ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাফিজ তানভীর নাফিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। সামিউল নেত্রকোনা শহরের সাতপাই পশ্চিমপাড়ার মৃত আব্দুল্লাহর ছেলে এবং নাফিজ মোক্তারপাড়া মসজিদ কোয়ার্টার এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে।

এদিকে, বুধবার রাত ৮টার দিকে নেত্রকোনা শহরের সাতপাই স্টেশন থেকে ক্রিয়েশান কিন্ডার গার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হাসান জয়কে উদ্ধার করে পুলিশ। জয় জেলা শহরের কাটলি এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে।

উদ্ধার তিন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল-কোচিং এবং অতিরিক্ত পড়ার চাপে ঘর ছেড়ে পালিয়েছে তারা। অতিরিক্ত লেখাপড়ার জন্য তাদের চাপে রাখছেন শিক্ষক এবং অভিভাবকরা। তাই ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নেত্রকোনা জেলার সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, অতিরিক্ত পড়ার চাপে শিক্ষার্থীদের দিন কাটে আনন্দহীন, নষ্ট হচ্ছে শৈশব। আমার মনে হয়, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মা-বাবাকে অবশ্যই শিশুদের শৈশব উপভোগ করতে দিতে হবে। পড়াশোনার নামে শিশুদের শৈশব, অধিকার, আনন্দ-বিনোদনের অধিকার হরণ করা যাবে না। তাহলেই হিতে বিপরীত হবে। বিষয়টি নিয়ে সবার সচেতন হওয়া জরুরি।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এসএম আশরাফুল আলম বলেন, ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন থেকে রাত পর্যন্ত ভিন্ন সময়ের মধ্যে চার শিশু নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। বিষয়গুলো নিয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় পৃথক পৃথক সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরবর্তীতে খবরগুলো জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশু অপহরণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু উদ্ধারের পর স্কুলপড়ুয়া শিশুরা জানায়, বিদ্যালয়-প্রাইভেটে অতিরিক্ত পড়ার চাপ ও মা-বাবার বকাঝকায় ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় এসব শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

প্রত্যেক শিশুর মা-বাবাকে সন্তানের প্রতি যত্নবান হয়ার পরামর্শ দিয়ে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত কোনো কিছু কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। এ ঘটনাগুলো থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। যাতে আর কোনো শিশু অতিরিক্ত পড়ার চাপে ঘর না ছাড়ে।

Bootstrap Image Preview