পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার ঘটনায় সাধুবাদ জানাচ্ছেন ভারতীয়রা। আর এ তালিকায় রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। পাকিস্তান উচিত জবাব দিয়েছে বলে তারা বিমানবাহনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পাকিস্তানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার ঘটনায় টুইটার ও বাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়। হ্যাশট্যাগ দিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক টু লেখা ভাইরাল হয়ে পড়ছে বিভিন্ন পোস্ট।
হ্যাশট্যাগ দিয়ে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স, ইন্ডিয়া স্ট্রাইকস ব্যাক এবং বালাকোট লেখাও ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যেই।
দলমত নির্বিশেষে ভারতীয় বিমানবাহিনী এখন সবার প্রশংসার সাগরে ভাসছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হামলার প্রশংসা করেছেন। তালিকায় আরও আছেন প্রকাশ জাভরেকর থেকে মায়াবতী আর আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
পাকিস্তানের সীমানায় মঙ্গলবার ভোরে বিমানবাহিনীর অভিযানের খবর আসার পর থেকেই ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করছেন দেশের হেভিওয়েটসব নেতা-নেত্রীরা।
বিমানবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে মঙ্গলবার সকালে টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটদের সালাম জানাই।’
শুধু রাহুলের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নয় কংগ্রেসের দলীয় টুইটার অ্যাকাউন্টে এ হামলার প্রশংসা করে বলা হয়, ‘ভারতীয়দের সুরক্ষিত রাখার জন্য বিমানবাহিনীর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও অটল প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছি।’
বিমানবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তিনি বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তার খাতিরে এই জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল।’
অভিযানকে মহাপরাক্রম বলে অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা দেয়ার পরই এই মহাপরাক্রম ঘটানো গেল। গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গোটা দেশ সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটা অন্য অর্থও রয়েছে, তা হলো ইন্ডিয়াজ অ্যামেজিং ফাইটার্স। জয় হিন্দ।’
বিমান হামলার প্রশংসা করেছেন বিএসপি নেত্রী তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। তবে বিজেপি’র সমালোচনা করতেও ছাড়েননি তিনি। মায়াবতীর মতে, ‘ভারতীয় সেনাকে আগেই এই অভিযানের ছাড়পত্র দেয়া উচিত ছিল মোদির।’
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও বিমানবাহিনীর এই অভিযানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও হামলা নিয়ে কথা বলেছেন। দিয়েছেন জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর।
একজন টুইট করেছেন, ‘‘প্রতিশোধ এমনই একটা পদ যা মাঝরাতে ঠান্ডার মধ্যেই পরিবেশন করা উচিত।
''আরেকজন ভারতীয় নাগরিক এবং ‘খেলাপ্রেমী' ভারতীয় বিমানবাহিনীর সঙ্গে ক্রিকেটের তুলনা করেছেন। তিনি একটি ছবি শেয়ার করেন যেখানে লেখা, ‘‘আরও একবার কী হয়েছে না জেনেই পাকিস্তানিরা রান আউট হয়ে গেল।''
আরেক জন হ্যাশট্যাগ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক টু দিয়ে লিখেছেন, ‘হাউ ইস দ্য জোশ? হাই স্যার.. হাউ ইস দ্য জইশ? ডেড স্যর।''
একজন টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ছবি দিয়ে মজাচ্ছলে লিখেছেন, ‘‘বিমানবাহিনীর হামলার পরে উনি এখন চেকআপ করাচ্ছেন।''
এই প্রথম বার ভারতীয় বিমানবাহিনী এলওসি পেরিয়ে আঘাত হানল। এমনকী ১৯৯৯ সালে কার্গিলের যুদ্ধের সময়েও কিন্তু বিমানবাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে আঘাত হানেনি।
পুলওয়ামা কাণ্ডে গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এর যথাযথ শাস্তিবিধান করা হবে।
পুলওয়ামা-কাণ্ডের পরে গোটা বিশ্ব ভারতের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছিল।
মঙ্গলবার ভোরে আকাশপথে অভিযান চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। তাদের এই অভিযানে ছিল ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। বালাকোট, মুজাফফারাবাদ ও চকোটিতে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে বোমা হামলা করে বিমানবাহিনী। ভারতয়ি গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এতে অন্তত ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের গাড়ি বহরে জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলা চালালে অন্তত ৪০ জন সেনা নিহত হয়।
সেই হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে হামলার হুমকি দেয়া হয়। পুলওয়ামার ওই আত্মঘাতী বোমা হামলার ঠিক ১২ দিনের মাথায় পাল্টা হামলা করল ভারত।