ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভাণ্ডারদহ গ্রামে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৫ জন। এমন মৃত্যুতে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা দাবি করছেন, দেব-দেবতার অবতারের কারণে একে একে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, এটি গ্রামবাসীর বিশ্বাস মাত্র। এটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ জন্য গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিভাগের ওই কর্মকর্তা।
নয়াবাড়ি গ্রামের পসিরুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুবরণ করা আবু তাহের বাড়িতে দেবতার আসর বসিয়েছিলেন। দেবতাকে তুষ্ট করতে না পারায় তার ও তার পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ জামান জুয়েল অজ্ঞাত রোগে পাঁচজনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, এটি দেব-দেবতা দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।
তবে এটি ভাইরাসজনিত রোগ। রোগ নিরাময়ে মেডিকেল টিম কাজ করছে। এ ব্যাপারে গ্রামবাসীকে আতঙ্কা না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রথমে বাবার মৃত্যু, পরে একই দিনে স্ত্রী ও জামাইয়ের। অবশিষ্ট দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে মারা যায়। অপর ভাই রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান রাত সাড়ে ৯টায়। মাত্র ১৯ দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ভাণ্ডারদহ গ্রামে।
স্থানীয়রা বলছেন, তারা সবাই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সমর কুমার চ্যাটার্জি বলেন, অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত মেহেদীকে মুমূর্ষু অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। আক্রান্তরা জ্বর ও বুক জ্বালা ভুগছিলেন। এ ছাড়া সাড়া শরীরে ব্যথা ও জ্বালা শুরু হলে নগ্ন হয়ে ছোটাছুটি করত। কিছুদিন পর আক্রান্তরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভাণ্ডারদহ নয়াবাড়ি গ্রামের আবু তাহের মৃত্যুবরণ করেন। আবু তাহের বয়স্ক হওয়ার কারণে বিষয়টি তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি তার পরিবার। এর পর গত বুধবার আবু তাহেরের জামাই হাবিবুর রহমান একইভাবে আক্রান্ত হন।
পর দিন সকালে ৯টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হাবিবুরের মৃত্যু হলে জামাইয়ের সেই মৃত্যুর সংবাদ শোনার কিছুক্ষণ পর আবু তাহেরের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম মৃত্যুবরণ করেন।
রবিবার সকালে একই রোগে আক্রান্ত হন আবু তাহেরের দুই ছেলে ইউসুফ আলী ও মেহেদী হাসান। তাদের দুজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার পথে সকালে ইউসুফ এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেহেদী মারা যান। সকালে মৃত্যুবরণ করা ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর বেগম ও তার একমাত্র ছেলে সন্তান আবির রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই গ্রামের সালমাসহ তিনজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফকদনপুর গ্রামে অজ্ঞাত রোগে নারী-পুরুষসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত গ্রামবাসী জানতে পারেনি তাদের স্বজনরা কী রোগে মারা গেছেন।