Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিজেকে ধনীর দুলাল ও ঢাবির ছাত্র পরিচয় দিতেন পলাশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:০৮ PM
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:০৮ PM

bdmorning Image Preview


ঢাকার উত্তরায় বাড়ি-গাড়িসহ বাবার অঢেল সম্পদ। আর নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এমন পরিচয় দিয়ে একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করতেন বিমান ছিনতাই চেষ্টায় নিহত পলাশ আহমদ। একইভাবে বগুড়ার মেয়ে ফাতেমা নুসরাত জাহান মেঘলাকে ভালোবাসার জালে ফেলেন তিনি।

গতকাল রবিবার আলোচিত বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর আজ সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় পলাশের সাবেক স্ত্রী ফাতেমা নুসরাত জাহান মেঘলার।

মেঘলার পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। শহরে নিজেদের বাড়ি ছাড়াও এই পরিবারের একটা সুনাম রয়েছে। তার বাবা অ্যাডভোকেট এবং মা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)।

জানা যায়, বিয়ের পর পলাশের মুখোশ উন্মোচন হলে নির্যাতনের শিকার হতে হয় মেঘলাকে। পলাশ এবং তার পরিবারের নির্যাতনের শিকার মেঘলা এক সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে মেঘলা জানান, একটি ভুল সিদ্ধান্ত তার এবং তার পরিবারের সুখগুলো কেড়ে নিয়েছে।

পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেঘলা জানান, ২০১৩ সালে মেঘলা যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখন ফেসবুকে পরিচয় হয় পলাশের সঙ্গে। মাত্র ৬ মাসের পরিচয়ে বাবা-মায়ের অমতে পালিয়ে পলাশকে বিয়ে করেন মেঘলা। পলাশ বলেছিলো তার বাবা বিদেশে থাকে। তাদের ঢাকায় বাড়ি রয়েছে। সেখানেই মেঘলাকে রাখবে। কিন্তু পালিয়ে ঢাকায় নিয়ে বিয়ের পর মেঘলাকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে।

মেঘলা আরও জানান, শুরুতেই পলাশের খামখেয়ালিপনা তার কাছে ধরা পড়ে। তার বাউন্ডুলে স্বভাব এবং বাজে খরচের বিষয়টি জানার পরও সে চেষ্টা করেছিল তাকে সুপথে ফিরিয়ে আনার। কিন্তু পলাশ এবং তার বাবা-মায়ের শ্বশুরবাড়ির টাকার প্রতি লোভ ছিল। তাকে মানসিক নির্যাতন করা হতো সব সময়। বলা হতো বাবা-মা বড় লোক, যাও টাকা নিয়ে এসো। এসব কারণে মেঘলা পলাশের সঙ্গে তিন মাসের বেশি সময় কোথাও থাকতে পারেনি। মেঘলার বাবা-মা একপর্যায়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া করে ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র কিনে দিলেও পলাশের চাহিদা দিনদিন বাড়তে থাকে।

তিনি আরও জানান, এছাড়া অন্য মেয়েদের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের লিস্টও বড় হতে থাকে। সব কিছু সহ্য করে ঘর করার চেষ্টা করতে থাকেন মেঘলা। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন মেঘলা। ছেলের নাম রাখা হয় আয়ান। বগুড়ায় সর্বশেষ সেই সময় এসেছিলেন পলাশ। এরপর আর শিশুর মুখ দেখেননি। ছেলে হওয়ার সংবাদ পেয়ে পলাশ এবং তার বাবা-মা টাকার জন্য আগের চাইতে বেশি জোর করতে থাকে মেঘলার পরিবারের প্রতি।

মেঘলা জানান, মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সুইসাইড করার চেষ্টা করেন। পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় বেঁচে যান। তবে এতো কিছুর পরও ফিরাতে পারেননি পলাশকে। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে নিজের ফেসবুক ও ইউটিউবে চিত্রনায়িকা সিমলাকে বিয়ে করার সংবাদ দেয় পলাশ। এটি জানতে পেরে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পলাশকে ডিভোর্স দেন মেঘলা। এরপর থেকে সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি। এমনকি বিমান ছিনতাই চেষ্টায় পলাশের নিহত হওয়ার খবরটিও তিনি জেনেছেন এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে।

মেঘলার মা জানান, মেয়ে ভুল করেছে, তার শাস্তিও পেয়েছে। এখন সে তার একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। পলাশ এবং তার পরিবারের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রবিবার বিকেলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে পলাশ। পরে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী ওই অস্ত্রধারীকে ধরতে কমান্ডো অভিযান পরিচালিত হয়। এরপর ছিনতাইকারীর নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে রুদ্ধশ্বাস এই অভিযান শেষ হয়।

Bootstrap Image Preview