অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দকুমার দত্ত রোডে ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন মোঃ শাওন। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরে ছাই হয়।
শাওন জানান, আত্মীয়ের অনুষ্ঠেন থাকার কারণে আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও আমার সব শেষ। আমার সকল দরকারি কাগজ-পত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল উপরে ফ্যামেলি ভাড়া দেওয়া আছে। কিন্তু বাড়ি মালিকের অধিক লাভের আক্রোশে ভবনজুড়েই যে রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-প্রসাধনীর গুদাম ভাড়া দিয়ে রেখেছেন তা আমার ও আমার পাশের দোকানীদের জানা ছিল না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাড়ির মালিকের লোভের কারণে কতগুলো মানুষ প্রাণ হারালো। এগুলো কি দেখার কেউ নেই !
শুধু যে নন্দকুমার দত্ত রোডে ওয়াহেদ ম্যানশনের চিত্র এটি তা নয়। সরেজমিন তথ্য বলছে, পুরান ঢাকার লালবাগ, ইসলাম বাগ, চকবাজার, পোস্তাসহ প্রায় প্রতিটি এলাকার ভবনগুলোতে কোনো না কোনো রাসায়নিক দ্রব্য পর্দাথ গোডাউন বা রাসায়নিক দ্রব্য পর্দাথ ব্যবহার করার হয় এমন কারখানা বা প্লাস্টিকের কারখানা গড়ে উঠেছে।
যার ফলে প্রতিনিয়ত পুরান ঢাকা হয়ে উঠছে মৃত্যু'র চোরাবালি। আর তাঁর প্রমাণ মিলে লালবাগ ফায়ার স্টেশনে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আশা ফোন কলগুলো থেকে। এখানে মোট কল এসেছে ৮০টি। এর মধ্যে মোট ৫৭ টি ফোন কলের পর ঘটনা স্থানে ফায়ার সার্ভিসের দল উপস্থিত হওয়ার আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন। বাকী ২৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এক বছরে এত পরিমানে অগ্নিকাণ্ডের কারণ কি জানতে চাওয়া হলে লালবাগ ফায়ার স্টেশনের রতন কুমার দেবনাথ জানান, প্রায় প্রতি মাসেই লালবাগ ও চকবাজার থানা এলাকায় কোনো না কোনো কারখানা যাত্রা শুরু করছে। যাদের কারোই কিন্তু ফায়ার লাইসেন্স নেই। তাদের কাছে থাকা তথ্য বলছে এই এই থানার আওতাধীন ৭০ শতাংশের বেশি আবাসিক ভবনের নিচে কারখানা অথবা গুদাম ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কারখানাগুলোতে থাকা কাঁচামাল কোনো ভাবে যদি আগুনের স্পর্শ পায় তাহলেই বড় ধরণের অগ্নকাণ্ডের ঘটনা সংগঠিত হতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আসলে আমাদের দায়িত্ব থেকে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কিছু দায়িত্ব আছে। তাঁরা যখন বহুতলা আবাসিক ভবনের অনুমতি দিচ্ছে তখন যদি কঠোরভাবে কিছু নীতিমালা করে দেয় তাহলে আবাসিক ভবনের গোডাউন বা কারখানা ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়ে যেত। দায়িত্ব তো শুধু আমাদের একার না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কেউ কথা বলার জন্য সময় দেননি।