Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে তেল-গ্যাস তৈরি করছেন ইদ্রিস আলী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:১০ PM
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:১৩ PM

bdmorning Image Preview


পরিত্যক্ত পলিথিন কাজে লাগিয়েছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৫৫ বছর বয়সী ইদ্রিস আলী। পলিথিনকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে তা থেকে তৈরি করেছেন জ্বালানি তেল পেট্রল, ডিজেল, গ্যাস এবং ফটোকপি মেশিনের কালি।

পলিথিনের স্থায়িত্ব বেশি। সহজে পচন ধরে না। পরিবেশ নিয়ে অসচেতন থাকায় কাজ শেষে পলিথিন ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়। এরপর তার স্থান হয় ডাস্টবিনে। পলিথিন পরিবেশ দূষণ করে। তাই এসব কাজে লাগিয়েছেন তিনি।

ইদ্রিস আলীর বাড়ি উপজেলার ভারশো ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। ১৯৮৫ সালে ৮ম শ্রেণী পাস করেছেন তিনি। তবে দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনার পাঠটি সেখানেই চুকিয়ে ফেলেছেন। এরপর জীবন সংগ্রামে নেমেছেন। নিজের জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই। শ্বশুরের দেয়া সামান্য জমিতে মাটির ঘর। সংসারে পাঁচ ছেলেমেয়ে।

তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা কৃষিসহ অন্যান্য কাজ করেন। আর স্ত্রী নূর জাহান বিবি একজন গৃহিণী। তিনি জীবিকা নির্বাহে কখনও ভ্যান চালিয়েছেন আবার কখনও কৃষিকাজ করেছেন। এছাড়া ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি, সাইকেল মেরামতের মিস্ত্রির কাজও করেছেন। সর্বশেষ ভটভটি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।

অল্প শিক্ষিত এ মানুষটি তার প্রতিভা কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন জ্বালানি তেল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই ওয়েল্ডিং মেশিন বা ঝালাই মেশিন। তার এ প্রতিভা একনজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী।

এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পলিথিন রিসাইকেল করে জ্বালানি তেল তৈরি করা হলে বাইরে থেকে যেমন তেলের আমদানি কমবে। তেমনি পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে।

পলিথিন থেকে শুধু জ্বালানি তেলই নয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ওয়েল্ডিং মেশিনও (ঝালাই মেশিন) তৈরি করছেন তিনি। ১২ ভোল্টের তিনটি ড্রাইসেল (শুষ্ক) ব্যাটারি দিয়ে তৈরি এ মেশিন দিয়ে প্রায় ৫০টি স্টিক ঝালাই করা সম্ভব। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এ মেশিনটির খরচ পড়েছে প্রায় ৪২ হাজার টাকা।

ইদ্রিস আলী বলেন, পরিত্যক্ত ও নোংরা পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি করা হচ্ছে- এমন একটি ভিডিও তিনি ইউটিউব চ্যানেলে দেখেছেন। এরপর বিষয়টি তিনি বাস্তবে রূপদান করেন।

মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে বাজার থেকে একটি টিনের তেলের বড় ড্রাম (ব্যারেল), একটি মাঝারি প্লাস্টিকের ড্রাম, ছোট দুইটি কনটেইনার, প্রায় ১৫ ফুট স্টিলের চিকন পাইপ, কয়েক হাত প্লাস্টিকের ফিতা কিনেন। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে জ্বালানি তেল তৈরি শুরু করেন।

তিনি বলেন, নোংরা ও পরিত্যক্ত পলিথিন ১০ টাকা কেজি করে টোকাইদের কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিনগুলো টিনের ড্রামে ভরে প্রায় আধা ঘণ্টা ড্রামের নিচে খড়ি দিয়ে জ্বাল দেন।

এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে ঠাণ্ডা হয়ে পেট্রল এবং ডিজেল ছোট কনটেইনারে এসে জমা হচ্ছে।

সাত কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৫ লিটার পেট্রলজাতীয় পদার্থ, আধা লিটার ডিজেল বের করতে সক্ষম হয়েছি। তবে গ্যাস ধরে রাখার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পুনরায় টিনের ড্রামের জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আর এ পেট্রল দিয়ে এরই মধ্যে মোটরসাইকেলে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে ৬০ টাকা লিটার হিসেবে বাজারজাত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

ইউএনও খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, জোনে উদ্ভাবনটির কার্যকারিতা কতটুকু ও পরিবেশসম্মত কি না, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। তার উদ্ভাবনী নমুনা আমরা কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠাব।

Bootstrap Image Preview