Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পিলখানা ট্র্যাজেডির দশ বছর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:২৮ AM
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:২৮ AM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের জঘন্যতম সেনা হত্যাযজ্ঞের দিন আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বাহিনীর বিপথগামী সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়ার নামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পিলখানায় নারকীয় তাণ্ডব চালায়। ওই দুই দিনে বাহিনীর তখনকার মহাপরিচালকসহ (ডিজি) বিদ্রোহীরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং নারী ও শিশুসহ আর ১৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের শহীদদের শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে আগামীকাল সোমবার। দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে, বিজিবির সদর দপ্তরসহ সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন অনুষ্ঠিত হবে। বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আগামীকাল সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একসঙ্গে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

পরদিন মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাদ আসর পৌনে পাঁচটায় পিলখানার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারী-কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

২০০৯ সালের নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের পর পুরো বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে বাহিনীর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কলঙ্কিত সেই ইতিহাস ও ক্ষত ভুলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি যা ঘটেছিল

অন্যসব দিনের মতোই হালকা শীতের আমেজে শুরু হয়েছিল সে দিনের সকাল। রোদ আরেকটি গাঢ় হতেই হঠাৎ গুলি আওয়াজে কেঁপে ওঠে পিলখানা। ভারী অস্ত্র আর বুলেটের গর্জনে পিলখানা থেকে ভেসে আসা শব্দে কাঁপন ধরে রাজধানীবাসীর হৃদয়ে।

রাইফেলস সপ্তাহ ঘিরে সেদিন উৎসবের আমেজ ছিল গোটা পিলখানায়। এর আড়ালেই ঘাতকরা ষড়যন্ত্রের ছক আঁকে। শুরু করে ভয়ঙ্কর নৃশংসতা। একদিন আগেই পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে তিনদিনব্যাপী রাইফেলস সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল বর্ণাঢ্য ওই আয়োজনের দ্বিতীয় দিন। নানা বর্ণিল আয়োজন আর উৎসবের মধ্য দিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল রাইফেলস সপ্তাহের। কিন্তু তার আগেই হত্যাযজ্ঞ।

পিলখানায় দরবার হলে সেদিন সকাল ৯টায় বসে বার্ষিক দরবার। সারাদেশ থেকে আসা বিডিআরের জওয়ান, জেসিও, এনসিওসহ বিপুলসংখ্যক সদস্যে তখন পরিপূর্ণ গোটা দরবার হল। দরবার মঞ্চে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ বিডিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বার্ষিক দরবারের সেই আনন্দমুখর পরিবেশ পাল্টে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। বিপথগামী বিডিআর জওয়ানরা দরবার হলে ঢুকে মহাপরিচালকের সামনে তাদের নানা দাবি নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। সিপাহি মাঈন ডিজির সামনে তাক্‌ করে বন্দুকের নল। আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে এ ঘাতক গুলি চালাতে না পারলেও অপর জওয়ানরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে ব্যারাক থেকে শত শত বিডিআর সদস্য বেরিয়ে দরবার হল ঘিরে ফেলে। শুরু করে বৃষ্টির মতো গুলি। অস্ত্রাগার নিয়ন্ত্রণে নেয় বিদ্রোহীরা, গোলা-বারুদ আর গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো পিলখানা পরিণত করতে থাকে ধ্বংসস্তূপে। মুহূর্তেই সেই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য বিডিআর ব্যাটালিয়নেও। পিলখানায় বিপথগামী বিদ্রোহীরা মেতে ওঠে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে।

এই পরিস্থিতিতে সকাল ১০টার দিকে সাভার ও ঢাকা সেনানিবাস থেকে সাঁজোয়া যান এবং ভারী অস্ত্র নিয়ে পিলখানার দিকে রওনা হন সেনা সদস্যরা। সকাল ১১টার মধ্যেই তারা ধানমণ্ডি ও নীলক্ষেত মোড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে বিদ্রোহীরা সদর গেট ও ৩ নম্বর গেট থেকে গুলি ছুড়তে থাকে সেনা সদস্যদের লক্ষ্য করে। বিডিআরের ১ নম্বর ও ৫ নম্বর গেটের আশপাশসহ বিভিন্ন পয়েন্টে আর্টিলারি গান ও সাঁজোয়া যান স্থাপন করা হয়। এতে বড় ধরনের রক্তপাতের আশঙ্কায় গোটা রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক। বিদ্রোহ সামাল দিতে শুরু হয় তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিরাম তৎপরতায় অনিবার্য আরও বড় ধরনের রক্তগঙ্গা থেকে রক্ষা পায় গোটা জাতি।

পিলখানার এই বিদ্রোহ শুরুর পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবনে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদ ও বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। মাঠপর্যায়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা বৈঠক চলতে থাকে ধানমণ্ডির আম্বালা ইন-এ। বিদ্রোহ দমনে নানাভাবে দফায় দফায় বৈঠক করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা ছুটে যান পিলখানায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান।

এরই ধারাবাহিকতায় বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয় বিদ্রোহীদের। পরে গভীর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিলখানায় গেলে তার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন বিদ্রোহীরা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।

তবে এরপরও পিলখানা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে পিলখানা শূন্য হয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। অবসান হয় ৩৬ ঘণ্টার বিদ্রোহের। তবে এ ঘটনায় প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।

Bootstrap Image Preview