এখনো দগদগে ক্ষত রয়েছে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের। ঝরে গেছে ৬৭টি তাজা প্রাণ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ।
একটি গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। অন্যদিকে সরকারের তদন্ত দল তিনটি বিষয় সামনে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম বলেছেন, 'আমরা ঘটনাস্থল থেকে অনেক ক্লু পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে তিনটি কারণে আগুন লাগতে পারে। কারণগুলো হচ্ছে- ট্রান্সফরমার, গ্যাস সিলিন্ডার অথবা কেমিক্যাল বিস্ফোরণ।'
পুরান ঢাকার বাসাবাড়িতে কেমিক্যালের গোডাউন নতুন কিছু নয়। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন নামের যে ভবনটিতে আগুনের সূত্রপাত বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই ভবনটির নিচতলায় বেআইনিভাবে শত শত দাহ্য রাসায়নিকের কনটেইনার এবং প্যাকেট পাওয়া গেছে। এই কেমিক্যালের কারণেই আগুন এত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভবনের ভেতরে গ্যাস লাইটার রিফিলের পদার্থ ছিল। এটা নিজেই একটা দাহ্য পদার্থ। এছাড়া আরো অন্যান্য কেমিক্যাল ছিল। প্রত্যেকটা জিনিসই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে। পারফিউমের বোতলে রিফিল করা হতো এখানে। সেই বোতলগুলো ব্লাস্ট হয়ে বোমের মতো কাজ করেছে।
এদিকে মিডিয়ার হাতে এসেছে ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ। তাতে দেখা যায়, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণেই আগুনের সুত্রপাত। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও বলেছেন, 'অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সূত্রপাতের সময়ের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। ফুটেজ বলছে, আগুনের সূত্রপাত সিলিন্ডার। সিলিন্ডারের আগুন লাগার পর মুহূর্তের মধ্যেই ভবনটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।'
এদিকে আজ শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন চুড়িহাট্টা এলাকা পরিদর্শনে এলে ব্যবসায়ীরা কেমিক্যালের পক্ষে নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। এসময় মেয়র তাদের যৌক্তিক সমাধানের আশ্বাস দেন।
চুড়িহাট্টা এলাকার জুয়েলারি ব্যবসায়ী হাজী আব্দুর রশিদ বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ঝরে যাচ্ছে প্রাণ। আমরা চাই দেশ থেকে সব গ্যাস সিলিন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হোক।
কেমিক্যালের কারণে আগুন এলাকাটিতে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এটা অস্বীকার করেন তিনি। তার মতে, কেমিক্যাল নয় সব কিছুর জন্য দায়ী গ্যাস সিলিন্ডার।
হাজী মুসলিম নামে অন্য ব্যবসায়ী বলেন, কেমিক্যাল থেকে সব কিছু তৈরি হয়। কেমিক্যাল থেকে কোনো দুর্ঘটনা আজও ঘটেনি। ইজতেমা ময়দান থেকে শুরু করে সব জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডার কেড়ে নিয়েছে প্রাণ। আমরা এই গ্যাস সিলিন্ডার চাই না।
তবে কেমিক্যালের কারণে গত বুধবারের (২০ ফেব্রুয়ারি) ঘটনায় আগুন মুহূর্তে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, ঝরে পড়ে ৬৭টি তাজা প্রাণ-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেমিক্যালের জন্যই আপনি সব পোরতাছেন, সাজের জিনিস পাইতাছেন।’
তবে ব্যবসায়ীদের দাবির সঙ্গে একমত নন এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, আবাসিক এলাকায় আর কোনো মরদেহ দেখতে চায় না, কেমিক্যালমুক্ত এলাকা চায়।
মোমেনা আহমেদ নামে অর্ধবয়সী এক নারী চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, কেমিক্যাল নামে ভয়ানক পদার্থ আর আবাসিক এলাকায় চায় না। কেমিক্যাল না থাকলে ওই দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতো বেশি হতো না। আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল দোকান, গুদাম বন্ধ হওয়া উচিৎ।
সাইদুল ইসলাম নামে অন্য বাসিন্দার মতে, সিলিন্ডার সব সমস্যার কারণ হতে পারে না। গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার দেখতে হবে তার মেয়াদ আছে কিনা। আমারও গাড়ি আছে সিলিন্ডারে চলে। নিয়মিত সার্ভিসিং করতে হবে, সতর্ক হতে হবে। ব্যবসায়ীরা সতর্ক না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখন তারা সিলিন্ডার নিয়ে নতুন ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছে।