Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ রবিবার, মে ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরেছেন সজীব ও তার পরিবার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:৩৩ PM
আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:৩৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


‍গত বুধবার রাতে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে ২৪ জন। কিন্তু অনেকেই আবার অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে। তেমনি একজন সজীব। বলছেন সেদিন নিজেসহ তার পরিবারকে কিভাবে বাঁচিয়েছেন।

‘বুধবার রাত সোয়া ১০ টার দিকে আমি রাতের খাবার খেয়ে বারন্দায় বসে ছিলাম। ঘরের মধ্যে মা ও ছোট বোন টিভি দেখছিল। বাবা তখনও বাসায় ফেরিনি। রাস্তায় প্রচুর যানজট লেগেছিল। রিকশা, গাড়ি, মোটরসাইকেল সব কিছু জ্যামে অাটকে ছিল। পুড়ে যাওয়া ওই গাড়ি ২টি অামার চোখের সামনেই সেখানে এসে দাঁড়ালো। একটি গাড়িতে অনেকগুলো সিলিন্ডার ছিল। সবই দেখছিলাম আমি। হঠাৎ করে গ্যাসের শো শো শব্দ শুনতে পাই। ১/২ সেকেণ্ডের মধ্যে কিছু একটা উপড়ে উড়ে গেল; এরপরেই গলিতে তাকিয়ে দেখি পুরো অাগুনের ময়দান।

অামি দ্রুত ঘরে ঢুকে অাম্মু ও ছোট বোনের হাত ধরে বলি, অাম্মু অাগুন বাইরে চলো। অাম্মু প্রথমে বলছিল কই কিসের অাগুন, অামি উত্তর না দিয়ে হাত টেনে ধরে ফ্যাল্টের দরজা পার হই। যখন দরজা থেকে বের হচ্ছিলাম তখন দেখি দেয়ালে থাকা ৪২ ইঞ্চি টিভিটা বিকট শব্দে ভেঙে চুরে মাটিতে পড়লো।’

রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অাগুনে পুড়ে যাওয়া অালোচিত সেই হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের বাসা থেকে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মা-বোনকে বাঁচিয়েছেন ১৯ বছরের সজীব। সিটি কলেজের এই শিক্ষার্থী ‘দৈনিক অামাদের সময়’ অনলাইনের কাছে এভাবেই ঘটনার বর্ননা দেন।

সজীব ইসলাম বলেন, ‘ভবনের নিচে নেমেই অামি মা ও বোনকে নিয়ে গলির উল্টো দিকে দৌঁড়াচ্ছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি অাগুন এসে অামাদের গায়ে লেগে গেল। কয়েকটা ভবন পার হয়ে মা ও ছোট বোনকে অামি নিরাপদ স্থানে রেখে অাবার ভবনের সামনে চলে অাসি। অামার উদ্দেশ্য ছিল ভবনের অন্য বাসায় থাকা চাচাদের বের করে আনা। কিন্ত ততক্ষণে আগুনে তীব্রটা এতটাই যে অামি অার ভবনে ঢুকতে পারিনি। শুধু চেয়ে চেয়ে মানুষ অার ঘর পোড়ানো দৃশ্যগুলো দেখছিলাম। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানি না। এর পর আমায় এক ফায়ার সার্ভিসের লোক সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে৷'

সব পুড়ে ছাই, তবুও সান্ত্বনা পরিবার বেঁচে আছে-কথাটি বলছিলেন সজীবের বাবা মো রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে আমি দৌঁড়ে এলাকায় চলে আসি। দূর থেকে বাসার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল আমার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী কেউই জীবিত নেই। আমি পাগলের মতো দৌঁড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ অামার মেয়ে অাব্বু বলে পিছন থেকে ডাক দেয়। আমি গিয়ে দেখি আমার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী সবাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অাছেন। আমার ছেলের জন্যই সবাই বেঁচে গেছে আমার সব পুড়ে ছাই, তবুও সান্ত্বনা পরিবার বেঁচে আছে।’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি প্লাস্টিকের ব্যবসা করি। তাই ঘরে নগদ ১৩ লাখ টাকা ছিল, অামার স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ ছিল সব কিছুই পুড়ে গেছে।’

ঘরের ভেতর থেকে পোড়া কিছু জমির কাগজপত্র খুঁজে বের করে এনেছেন রফিকুল। সেসব পোড়া কাগজ হাতে নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন অার বার বার চোখ মুছছিলেন তিনি।

Bootstrap Image Preview