রাজধানীর চকবাজার এলাকায় আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী অন্তত ৭০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এখনো কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪০টি ইউনিট।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বজনদের আহাজারীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে কান্নার রোল। কেউ কেউ ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। কেউ স্বজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
এমন একজনকে হাসপাতালে সামনে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখা যায়। তার নাম জরিনা বেগম। তার দুই ভাই মোহাম্মদ আলী ও অপু। মোহাম্মদ আলীর তিন বছরের ছেলে আরাফাত পুড়ে মারা গেছে। ঘটনার সময় তারা বন্ধুদের সাথে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আরাফাতের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা নিহত রোহানের চাচাতো ভাই মোমিন খান বলেন, ২ দিন পর রোহানের বোনের বিয়ে। বিয়ের কেনে কাটা করতেই সে চকবাজারে এসেছিল।
রহানের ব্যাপারে তার বাবা-মায়ের কাছে যান্তে চাইলে শোকে স্তব্ধ পবিবার কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। ছেলের ছবি হাতে ডুক্রে কাদতে দেখা গেছে রোহানের মাকে।
অন্য দিকে তুহিন নামের একজন কেঁদে কেঁদে মোবাইলে তার পরিবারকে বলছে, ‘আব্বা, আমি তুহিন, এনামুল পুড়ে মারা গেছে। আমি আর রাজীব ঢাকা মেডিকেল মেডিকেল এসে তাকে খুইজ্যা পাইছি।’
এনামুলের পুরা নাম কাজী এনামুল হক অভি। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বিবিএ পড়েছেন। রূপালী ইনস্যুরেন্সে ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এনামুলের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ। তিনি ওই এলাকায় থাকতেন। রাতে দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। তুহিন, কাজী আর নিহত এনামুল সমবয়সী। সম্পর্কে তুহিনের ভাতিজা এনামুল।
মোহাম্মদ বাবু (২০) নামের একজন তার বাবাকে হারিয়ে মেডিকেলের সামনে বসে বিলাপ করছিলেন। তার বাবার নাম সিদ্দিকুল্লাহ। তার বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে। তিনি চকবাজারে কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন। সিদ্দিকুল্লাহ একটি হোটেলে খেতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু সেই হোটেল থেকে আর বেরুতে পারেননি তিনি।
একটি মসলা কোম্পানিতে কাজ করতে মো. জুম্মন। তার দুই ছেলে রাশেদ ও রাব্বী। হাসপাতালের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। রাশেদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এতগুলো মানুষ পুড়ে মারা গেল। এটা সহ্য করার মতো নয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে ৬৫ জনের লাশ এসেছে। এর মধ্যে ৫৭ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ৩টি শিশুর লাশ। লাশগুলো শনাক্তের সুবিধার্থে নম্বর দিয়ে রাখা হচ্ছে। স্বজনেরা এসে শনাক্ত করতে পারলে তাদের নম্বরগুলো জানানো হচ্ছে।