Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাকিস্তানকে ‘পঙ্গু’ করে দিচ্ছে ভারত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:২৩ PM
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই পাকিস্তানকে যেন ‘ভাতে মারতে’ একের পর এক পরিকল্পনা করছে ভারত। কূটনৈতিক চাপ তো রয়েছেই। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক চুক্তি সেরকম সুদৃঢ় না হলেও বিভিন্ন জিনিসের লেনদেন চলে দুই দেশে। যার মধ্যে অন্যতম ফল, চামড়া, সিমেন্ট ও খনিজ দ্রব্য। গত বছরই প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটির দ্রব্য আমদানি করা হয়। কিন্তু আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ হয়ে যাওয়ার ফলে আমদানি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে কিছুটা হলেও আর্থিক ধাক্কা খাবে পাকিস্তান।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কাশ্মীরের পুলওয়ামারে আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ভারত। ইতিমধ্যে পাকিস্তানি পণ্য আমদানিতে ২০০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা এটি। হামলার পর চিরবৈরী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ আর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ভারত।

এর মধ্যে ভারতজুড়ে হামলা ও হয়রানির শিকার হতে শুরু করেছেন কাশ্মীরি লোকজন। তাদের মারধর, দোকান ভাঙচুর ও ভাড়া বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার খবরও শোনা গেছে। উত্তরাঞ্চলীয় শহর দেরাদুনে ছাত্রীদের হোস্টেলে হামলার চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে।

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়। তবে এর মধ্যে ভারতের রপ্তানীর পরিমাণ-ই বেশি।

পাকিস্তানে ভারত সবজি-লোহা থেকে শুরু করে রাসায়নিক দ্রব্যসহ আরো নানা কিছু রপ্তানি করে। অন্য দিকে পাকিস্তানও কিছু জিনিস পাঠায়।

এদিকে, আজ থেকে পাকিস্তানি সিমেন্ট কেনা বন্ধ করল ভারত।

ভারতের আমদানিকারকরা পাকিস্তান থেকে আসা সিমেন্টভর্তি ৬০০-৮০০টি কন্টেইনার ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সে দেশের রফতানিকারকদের। কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের আমদানি পণ্যের ওপর ভারত ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় দুই দেশের বাণিজ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

পাকিস্তানের দৈনিক ডনকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির এক সিমেন্ট রফতানিকারক বলেন, ‘কন্টেইনার ফিরিয়ে নিতে ভারতীয় আমদানিকারকদের কাছ থেকে বার্তা পাওয়া শুরু করেছে তারা। কিছু রফতানিকারক ইতোমধ্যে তাদের পাঠানো পণ্যবাহী জাহাজ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।’

পাকিস্তানের ওই সিমেন্ট রফাতনিকারক বলেন, ‘বর্তমানে করাচি বন্দর, কলম্বো, দুবাই কিংবা মাঝ সাগরে ৬০০ থেকে ৮০০টি সিমেন্টবাহী জাহাজ আছে। বেশিরভাগ সিমেন্টের গন্তব্য ভারতের কেরালা রাজ্যে। গত বছর রাজ্যটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেখানে অবকাঠামো নির্মাণে ৫০ বিলিয়ন রুপি ব্যয়ের পরিকল্পনার কথা জানায় সরকার।’

রফতানি হুমকির মুখে পড়েছে বলে আশঙ্কা করে তিনি আরও বলেন ‘সম্প্রতি পুলওয়ামা হামলার পর পরিস্থিতি হঠাৎ করে বদলে যায়। ভারতের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। নতুন সরকার এসে যদি এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তাহলে হয়তো পুনরায় রফতানি শুরু হতে পারে।’

চলতি অর্থবছরের জুন থেকে জানুয়ারি এই ছয় মাসে ভারতে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১০৮ টন সিমেন্ট রফতানি করেছে পাকিস্তান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ২১২ মেট্রিক টন।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি সিমেন্ট রফতানি করে ভারতে।

এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, এমএফএম তকমা তুলে নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে পাকিস্তানকে অনেকটা দুর্বল করে দেওয়া যাবে। কারণ এই তকমা তুলে নেওয়া মানে দু’দেশের মধ্যে যে বার্ষিক বাণিজ্য কমে গিয়ে ২০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই হবে পাকিস্তানের কাছে বড় ধাক্কা।

তাছাড়াও এই কাশ্মির হামলার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে ভারতে বিভিন্ন জেলার হোটেল, লজে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভাড়া দেয়া ও অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানিদের কোনো কাজ কিংবা চাকরিতে নিয়োগ না দেয়া এবং রাজস্থান সীমান্তের কাছের এই জেলার নাগরিকদের পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক না রাখারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে হামলার ঘটনায়, পাকিস্তানের নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজস্থান ছাড়তে হবে। রাজস্থানের স্থানীয় প্রশাসন এক নির্দেশে বলেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানি নাগরিকদের রাজস্থান ছাড়তে হবে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পালা এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আলোচনার সময় শেষ। এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পালা। পুলওয়ামার জঙ্গি হামলা আমাদের এই বার্তা দেয়। সারা দুনিয়ায় জঙ্গিবাদ এবং এর সমর্থকদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে।

মোদির হুঁশিয়ারির প্রতি উত্তরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারত যদি হামলা করে, পাকিস্তান এর প্রতিশোধ নেবে।

পুলওয়ামার হামলায় ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে ভারত যা পদক্ষেপ করবে তাতে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ট্রাম্পের দেশ। হামলার তীব্র নিন্দা করেছে বিভিন্ন দেশ। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও চাপ বাড়তে শুরু করেছে পাকিস্তানের উপর। ফলে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ভাবে সাঁড়াশি চাপে পড়েছে পাকিস্তান।

পৃথিবীর সবচেয়ে সামরিক অঞ্চলের একটি হচ্ছে কাশ্মীর। ১৯৮৯ সাল থেকে ছড়িয়ে পড়া বিদ্রোহী দমন করতে সেখানে পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) এর ধূসর তালিকায় রয়েছে। এফএটিএফ হল একটি ইন্টার গভর্নমেন্টাল বডি। যারা জঙ্গিদের অর্থ সরবরাহ আটকানোর কাজ করে থাকে। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বার বারই অভিযোগ উঠেছে তারা জঙ্গিদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। যদি এফএটিএফ’র কালো তালিকায় নাম উঠে যায় পাকিস্তানের তা হলে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’র মতো সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। ধূসর তালিকা নয়, এফএটিএফ’র কালো তালিকাতে পাকিস্তানকে ফেলা হোক, এটাই এখন চাইছে ভারত।

সংঘর্ষে এ পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। কেবল ২০১৬ সাল থেকে ৬০০ জন নিহত হন। গত কয়েক দশকে এটিই সর্বোচ্চ নিহতের সংখ্যা।

Bootstrap Image Preview