Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'প্রশাসনকে ম্যানেজ করে' চলছে অবৈধ ইটভাটাগুলো

রোকনুজ্জামান রোকন, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:১১ PM
আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:১১ PM

bdmorning Image Preview


দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটার নিবন্ধন ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও নেই। তার পরও বছরের পর বছর ধরে ইটভাটাগুলো চালু রয়েছে। ওইসব ইটভাটাগুলোতে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েই প্রায় তিন মাস ধরে অবাধে পুড়ে আসা হচ্ছে কাঠ ও খড়ি। এতে এক দিকে যেমন রাস্তার দুই ধার বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে অন্য দিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

কথিত ইটভাটা মালিক সমিতি প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলো চালু রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে প্রশাসনকে বিষয়টি বারবার অবগত করাসহ দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় এ বিষয়ে খবর প্রকাশ হলে তা দৃষ্টিগোচর হওয়া সত্ত্বেও ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়না প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

সম্প্রতি সরজমিনে ইটভাটাগুলো ঘুরে স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, নবাবগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশই ইটভাটা কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটাগুলোতে শতশত মণ কাঠ ও খড়ির স্তপ করে রেখে প্রকাশ্যে দিনরাত অবাধে কাঠ ও খড়ি পোড়ানো হচ্ছে।

ভাটাগুলো হচ্ছে উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউপির খলিশা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের এ.ও.এল নামক, রফিকুল ইসলামের আর.এ.আর নামক, রতনের আর.এম.এ নামক, আমিনুল ইসলামের, পত্নীচান গ্রামের সিরাজুলের এম.এস.বি নামক, কাশিপুর আমতলার মোসলেম উদ্দিন এম.এস.বি নামক, মিঠাপুকুর গ্রামের মোস্তাফিজুরের ডব্লিউ.আর.এস নামক, দাউদপুর ইউপির হেয়াতপুর এলাকার আবু শাহাদৎ সায়েমেরর এস.আর.বি ব্রিক্স নামক ও বিনোদনগর ইউপির রামভাদ্রপুর এলাকার মিঠুর টি.এইচ.এন নামক ভাটা।

কাঠ ও খড়ি না পুড়তে ইউএনও'র নির্দেষনা সত্ত্বেও কেন পুড়ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এ.ও.এল'র নামের ভাটা মালিক আনোয়ার বলেন, সবাই কাঠ ও খড়ি পুড়ছে। তাই আমিও পুড়ছি। বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়েই তার ভাটায় তিনি কাঠ ও খড়ি পুড়ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মশিউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে অবাধে কাঠ ও খড়ি পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, যে সকল ইটভাটায় কাঠ ও খড়ি পোড়ানো হচ্ছে নির্দিষ্ট করে সেগুলোর নাম দিন।

এ দিকে বৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাটা মালিকরা নিয়ম অনুযায়ী সরকারের রাজস্ব প্রদান করে ও কয়লা পুড়ছে বলে দাবি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা বলেন, ইউএনও অন্যদের অবাধে কাঠ ও খড়ি পোড়ার সুযোগ দিয়ে আমাদের ঠকাচ্ছে। এটা উনার থেকে অপ্রত্যাশিত। কয়লা পুড়ে ইট প্রস্তুত করতে আমাদের বেশি খরচ হচ্ছে। পক্ষান্তরে যারা কয়লা না পুড়ে কাঠ-খড়ি পুড়ছে তাদের কম খরচ হচ্ছে। আর খরচ কম হয়াতে প্রতি ১০০০ ইটে আমাদের থেকে অন্তত ২০০০ টাকা কম মূল্যে বিক্রয় করছে তারা। ফলে আমাদের থেকে কেউ ইট ক্রয় করছে না। আর এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি বলে- অভিযোগ বৈধ ভাটা মালিকদের।

বৈধভাবে গড়ে উঠা ভাটা মালিকদের উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ভাটাগুলোর তালিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলে বিষয়টি ইউএনওর দৃষ্টিগোচর হয়। তবুও মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও ভাটাগুলোতে কেন অভিযান চালানো হচ্ছেনা তা জানতে ইউএনওকে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। যার কারনে পরে আর উনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এসব ইটভাটা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় নির্দেশ দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়নি।

ইটভাটা সংলগ্ন বাড়ির মালিকরা জানান, ইটভাটার কারণে তাদের ফলদ গাছগুলো নষ্ট হচ্ছে। মাঠের ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়টি তারা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি  ইটভাটার মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশই ইটভাটার পরিবেশ অধিদফতর ছাড়পত্র ও নিবন্ধন নেই। প্রতি বছর ইটভাটা চালুর পরপরই উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতিকে তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দেন। ইটভাটা মালিক সমিতির কর্তা ব্যক্তিরা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের লোকজনকে খুশি রাখেন বলে তারা জানিয়েছেন।

Bootstrap Image Preview