Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জুনে ই-পাসপোর্ট হাতে পাবে বাংলাদেশের নাগরিকরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৩ PM
আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


চলতি বছরের জুন মাসে ই-পাসপোর্ট হাতে পাবে বাংলাদেশের নাগরিকরা। আগামী জুন থেকে ই-পাসপোর্ট দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট পাবে দেশবাসী।

গত বছরের ডিসেম্বর ও পরে এ বছরের মার্চ মাসে আসার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় বিলম্ব হয় ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম। তবে আগামী জুনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে আশাবাদী অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বলেন, এখনও কাজ চলছে। যত শিগগিরই সম্ভব ই-পাসপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি। কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা এ বছরের জুন মাসকে টার্গেট করে কাজ করছি।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের চুক্তি করেন। এরপর ডিসেম্বর মাসে পাসপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনে অধিদফতর।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ দিয়ে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও কমার্শিয়াল ইমপোর্টেন্ট পারসনকে (সিআইপি) ই-পাসপোর্ট দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল। সর্বসাধারণকে জানুয়ারিতে পাসপোর্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে দশ আঙুলের ছাপ থাকার কথা। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি মাত্র দুটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে। ‘মাত্র ২ আঙ্গুলের ছাপে ভবিষ্যতে জালিয়াতি হতে পারে’- তাই এ প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না পাসপোর্ট অধিদফতর। এনিয়ে জার্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। এটাও ই-পাসপোর্টের বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ।

এদিকে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর রাখার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও এর ফি এখনও নির্ধারিত হয়নি। অধিদফতর থেকে স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য তিন ধরনের ফি’র পরিমাণ প্রস্তাব করা হলেও ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে ফি চূড়ান্ত করে দেয়া হয়নি।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট পাসপোর্ট হবে ১০ বছর মেয়াদের। ফি নির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার (২১ দিন), এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার (৭ দিন) এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা (১ দিন) প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়াও পাসপোর্টের দুই ধরনের ক্যাটাগরি হচ্ছে। একটা ৪৮ পৃষ্টার। আরেকটা ৭২ পৃষ্টার। যারা বেশি নিতে চান তাদের ফি-টাও একটু বেশি দিতে হবে।

এ বিষয়ে অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, এটি ৪ হাজার কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প। বর্তমান অর্থবছরের বাজেট হয়েছে জুনে। এর মাসখানেক পর ই-পাসপোর্ট প্রকল্প চুক্তি হয়। সরকার যেহেতু বাজেটে ই-পাসপোর্টের বরাদ্দ রাখেনি তাই এই কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয়ের সত্যতা থাকে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি ও পরিচয় গোপন করা কঠিন হবে বলে দাবি করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

পাসপোর্ট অধিদফতর জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

পাসপোর্ট অধিদফতর জানায়, শুরুতে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এরপর আরও ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে ওই কারখানায় থেকেই পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত রাখা হবে।

ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। পুরো টাকাই বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। বর্তমানে বই আকারের পাসপোর্টে সরকারের যে টাকা ব্যয় হয়, সেই অনুপাতে ই-পাসপোর্ট চালু হলে পাসপোর্ট প্রতি সরকারের প্রায় ৩ ডলার করে সাশ্রয় হবে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

এদিকে অনেকেই শঙ্কায় আছেন, ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বাতিল হবে কি না। এ বিষয়ে অধিদফতর জানায়, কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। তবে যাদের এমআরপি রয়েছে সেটিও গ্রহণযোগ্য হবে।

Bootstrap Image Preview