Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২১ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নানা সমস্যায় জর্জরিত পার্বতীপুর রেলস্টেশন, রি-মডেলিংয়ের দাবি

আব্দুল্লাহ আল মামুন, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:২৬ AM
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:২৬ AM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমজোনের সর্ববৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ জংশন পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন। প্রায় দেড় শতাব্দীর পুরনো এ স্টেশনটি জীর্ণশীর্ণ চেহারা নিয়ে আজও পরিবহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। জন দাবি থাকা  সত্ত্বেও অদ্যাবধি এ স্টেশনটির আধুনিকায়ন করা হয় নি।

জানা যায়, ১৮৭৯ সালে বৃটিশ সরকার ১৩ হাজার ৯৪২ ফুট আয়তনের ৫টি প্লাটফর্ম নিয়ে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। দীর্ঘ ৫ বছর পরে ১৮৮৪ সালে চালু হয় এ স্টেশনটি। স্টেশনের ৪'শ ৪৬ দশমিক ৯৭ একর আয়তনের অপারেশন এরিয়াসহ নিজস্ব ভূমির পরিমাণ ৭'শ ৮৮ দশমিক ২৭ একর।

আকার ও গুরুত্বের বিচারে এটি ছিল পূর্ব বাংলার সর্ববৃহৎ রেলওয়ে স্টেশন। এক সময় অবিভুক্ত বাংলার কলকাতা থেকে আসামের গুয়াহাটি পর্যন্ত এ স্টেশন হয়ে মেইল ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করতো। চতুর্মুখি এ রেল জংশন স্টেশন থেকে উত্তরে সৈয়দপুর, নীলফামারীও চিলাহাটি, দক্ষিণে জয়পুরহাট, সান্তাহার, ঈশ্বরদী, খুলনা ও রাজশাহী, পূবে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, ঢাকা ও পশ্চিমে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় পর্যন্ত যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন যাতায়াত করে।

এ রুটের কাঞ্চন স্টেশন থেকে বিরল স্টেশন হয়ে ভারতের রাধিকাপুর ও কাটিহার দিয়ে আন্তঃদেশিয় মালবাহী ট্রেন চলাচল করে।    

এক সময় এ স্টেশনের উপর দিয়ে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকালসহ ৫৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো। বর্তমানে 
আন্তঃনগর ট্রেনসহ প্রতিদিন ৩৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন মিটারগেজ, ব্রডগেজ ও মিশ্রগেজের ৪টি রুটে চলাচল করছে। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার ট্রেন যাত্রী উঠানামা করছেন।

বৃটিশ আমলে বাণিজ্যিক স্বার্থে এ স্টেশনটি ব্যবহার করা হতো। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনামলে অবহেলা ও বৈষ্যমের শিকার হয়েছে পার্বতীপুর রেলস্টেশন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ এ রেলওয়ে স্টেশন আধুনিকায়নে কেউ এগিয়ে আসেন নি। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ স্টেশনটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। 

প্রসঙ্গত, পার্বতীপুরে রয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি, বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বীর উত্তম শহীদ মাহবুব সেনা নিবাস, উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম উত্তর-পশ্চিম মৎস্য সম্প্রসারণ প্রকল্প, রেলওয়ের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (কেলোকা), রেলওয়ে ডিজেল কারখানা, রেলহেড অয়েল ডিপো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), মাদকদ্রব্য পণ্যগার, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র (নিপোর্ট), ডাক বিভাগের পোস্টাল মহকুমা, রেলওয়ের হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও বিদেশি মিশনারী দ্বারা পরিচালিত ল্যাম্ব হাসপাতালের কারণে দেশি-বিদেশী যাত্রীদের গমনাগমনে জংশনটির গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ।

আওয়ামী লীগ সরকারের চার মেয়াদে ৫ মন্ত্রী, ৩ সচিব ও রেলওয়ের মহা-পরিচালকসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণ এ রেলস্টেশন সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনের সময় এলাকাবাসী রেলস্টেশনের সমস্যার কথা তুলে ধরলে সংশ্লিষ্টরা শুধু উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত যাত্রী ছাউনি অধিকাংশ জরাজীর্ণ।

সম্প্রতি জোড়াতালি দিয়ে প্লাটফর্মের সংস্কার কাজ করা হয়েছে। স্টেশনে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। প্লাটফর্মে টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। পানির জন্য হাহাকার অবস্থা ট্রেন যাত্রীদের। ২ ও ৩নং প্লাটফর্মে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক দু'টি উচ্চ শ্রেণির হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে ভালোভাবে চলে আসছিল। স্বাধীনতার কয়েক বছর দু'টি হোটেলে যাত্রীদের খাবার ব্যবস্থা ছিল। পরে হোটেল দু'টি বন্ধ হয়ে যায়। 

বেশিরভাগ সময়ে তালাবদ্ধ থাকায় যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার থাকলেও বসার স্থান না পাওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। স্টেশন নোংরা পরিবেশ, আলোর অভাব, বখাটে, মাদকাসক্ত, চোরাচালানী, ছিনতাই ও ছিঁচকে চোরের উপদ্রবে যাত্রীসাধারণরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।

রেল স্টেশনের নানাবিধ সমস্যার এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বতীপুর রেলস্টেশন মাস্টার অফিস সূত্রে বলা হয়, স্টেশনে নানাবিধ সমস্যা বিরাজমান রয়েছে। এর মধ্যে ১নং প্লাটফর্মের মুসাফির খানার টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না যাত্রীরা। পাকা টয়লেট থাকলেও হাউজ না থাকার কারণে সে টয়লেটগুলো তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ২ ও ৩ নং প্লাটফর্মে যাত্রীদের নেই বসার জায়গা।                      
                       


 

Bootstrap Image Preview