Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আপনি তো মেয়ে না, আপনাকে চাপ দিলে কী সমস্যা ?’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:৪৪ AM
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:৪৬ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


তল্লাশির নামে পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন শরাফুল আলম সুমন নামের এক ব্যক্তি। রোববার রাজধানীর মহাখালী-গুলশান সড়কের একটি চেকপোস্টে তিনি এ হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

আমি শরাফুল আলম সুমন ওরফে আনন্দ কুটুম। একজন প্রধান সহকারী বিজ্ঞাপন নির্মাতা। আজ আনুমানিক দুপুর চারটার দিকে গ্রামীণ ইন্টেলের অফিসে একটা মিটিং শেষে আমি মহাখালী গুলশান রাস্তা দিয়ে হেঁটে গুলশান-১-এর দিকে আসছিলাম। পথিমধ্যে চেকপোস্ট-২ (ব্রিজের ওপর) এ আমাকে পুলিশ আটকে তল্লাশি করতে চাইলে আমি দাঁড়িয়ে অনুরোধ করি যে, আমার হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা শেষ করার জন্য দুই মিনিট সময় দেওয়া হোক।

দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সময় দিলে আমি পাশে আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে সিগারেট শেষ করে তার কাছে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করি, বলুন। তিনি আমাকে তল্লাশি করতে চাইলে আমি তাকে আমার কাঁধের ব্যাগ খুলে হাতে দেই। তিনি আমাকে ব্যাগের চেন খুলে দিতে বলেন, আমি চেইন খুলে দেই। তিনি ব্যাগ তল্লাশি শেষে আমাকে পকেট থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ বের করতে বলেন। আমি মোবাইল এবং মানিব্যাগ বের করার পর তিনি আমার শরীর তল্লাশি করেন এবং বাজেভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাত দেন। যেটা অনেকটা সমকামী আচরণ বলেই আমার মনে হয়েছে। আমি তাকে বিনয়ের সাথে বলি, আপনি চেক করবেন করেন, কিন্তু শরীরের সেন্সেটিভ স্থানে চাপ দিচ্ছেন কেন?

তিনি আমার প্রশ্নে রেগে গিয়ে আমাকে বলেন এটা তার ডিউটির অংশ। আমি বলি, মানুষকে শারীরিক ভাবে অসম্মান করা কিভাবে আপনার ডিউটির অংশ হতে পারে? তিনি তার সিনিয়র ‘কাদির’ সাহেবকে ডেকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। কাদির সাহেব এসে বলেন, ‘আপনি তো মেয়ে নয়, আপনাকে চাপ দিলে সমস্যা কী?’ আমি বলি, প্রশ্নটা ছেলে বা মেয়ের নয়। প্রশ্ন হলো, আপনি কাউকে প্রকাশ্যে এভাবে শারীরিকভাবে অসম্মান করে চাপ দিতে পারেন কি না? তখন আগের সেই পুলিশটি আমাকে বাজে ভাষায় গালি দিয়ে আমাকে আঙুল তুলে শাসায়। তখন আমি তাকে আঙুল তুলে বলি, আঙ্গুল তুলে কথা বলবেন না। আর অকারণ গালি দিবেন না।

এবার সে আমার দিকে বন্দুক তুলে বলে, ‘তোকে এখানেই মেরে ফেলব, শুয়োরের বাচ্চা।’ আমি তখন মোবাইল বের করে ভিডিও করতে গেলে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলা হয় যে আমাকে অ্যারেস্ট করা হলো। তার সাথে পুলিশ বক্সে যেতে হবে। যেহেতু আমি একজন আইন মেনে চলা নাগরিক সুতরাং আমি তার সাথে তার নির্দেশে পুলিশ বক্সে যাই। পুলিশ বক্সে নেওয়ার পরে কোনো ধরনের সিগনাল ছাড়াই কাদির আমাকে বেধড়ক পেটায়। লাথি মারে আর অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এরপর আমার মোবাইল আটকে রাখে। আমি তাকে অনুরোধ করে বলি যে, যেহেতু আমাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে আমার ফ্যামিলিকে জানানোর সুযোগ দেওয়া হোক। আমাকে ফ্যামিলির সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে না দিয়ে আরেক তরফা মারধর করে। যাতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ চিড়ে যায়।

এর পর সে আমাকে বলে, ‘আমি ছাত্রলীগ করে এসেছি। তুই আমারে ক্ষমতা দেখাস?’ খুবই দুঃখের বিষয় হল যে আজকাল পুলিশকে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করতে হচ্ছে অন্যায় কাজের বৈধতা পেতে। আমি প্রতিবাদ করে বলি, আপনি অকারণ ছাত্রলীগের নাম কেন কলুষিত করছেন? তিনি আমাকে আরও অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা পরে আমাকে আমার মোবাইল ফেরত দেয়। তারপর আমি আমার বড় ভাই চলচ্চিত্র পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খানকে ফোন করলে তিনি এসে আমাকে ছাড়িয়ে নেন। ততোক্ষণে আরও একজন উর্ধতন কর্মকর্তা এসে হাজির হন। তখন কাদির পুরো বিষয়টা উল্টে দিয়ে আমার ঘাড়েই দোষ চাপায় যা পুরোটাই মিথ্যা।

আমি সবিনয় নিবেদন করছি বাংলাদেশ পুলিশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এর সুষ্ঠু তদন্ত করে সথাযত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমি ২৫ বছরের একজন তরুণ। পড়ালেখা করেছি দেশের বাইরে। নিজের দেশে ফিরে এসেই যদি এমন পরিস্থিতিতে পরতে হয় তবে মনে করছি দেশ থেকে বিদেশই উত্তম।

আমার দাদু একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার মা একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা। আমরা আমাদের প্রতিটি দিন কোন না কোন ভাবে দেশের সেবায় ব্যয় করি। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমার দেশে ফেরৎ আসা। কিন্তু এ কেমন দেশ আমার??

১। প্রথমত তিনি শারীরিকভাবে অপমান করেছে এবং এই নিয়ে তিনি অনুতপ্ত নয়।

২। তিনি আমার বাবা মাকে গালি দিয়েছেন।

৩। তিনি প্রকাশ্যে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।

৪। তিনি ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ক্রাইম করেছেন।

৫। তিনি কোনো প্রকার আইনগত নির্দেশনা ছাড়াই আমাকে পিটিয়েছেন যার নিশানা আমার শরীরে লেগে আছে।

৬। তিনি সব কিছু অস্বীকার করে মিথ্যা বয়ান দিয়েছেন সিনিয়রের কাছে।

আশাকরি বাংলাদেশ পুলিশ বুঝতে সমর্থ হবে যে কতোটা বাজে সিচ্যুয়েশনের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। এটা কি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের চিত্র? এটাই কি আমাদের প্রিয় পুলিশের চিরায়ত রূপ?? এর কী বিচার হবে না? দুঃখজনক।

Bootstrap Image Preview