বর্তমানে বিদ্যুতের প্রকৃত উত্পাদন ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে দৈনিক চাহিদা সাড়ে সাত থেকে আট হাজার মেগাওয়াট। ফলে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্প কারখানাগুলোকে নিজস্ব ক্যাপটিভ বিদ্যুত্ ব্যবহারে অনুত্সাহিত করছে সরকার। তাদেরকে গ্রিড বিদ্যুৎ ব্যবহারের অনুরোধও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) দৈনিক উত্পাদন প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১ ডিসেম্বর সারা দেশে প্রকৃত বিদ্যুৎ উত্পাদন হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। তবে বৈকালিক উত্পাদন ছিল ৭ হাজার ৯৯১ মেগাওয়াট। গত ২৮ ডিসেম্বর সারা দেশে দিনের বেলা বিদ্যুৎ উত্পাদন হয় মোট ৭ হাজার ১৪৪ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যায় ছিল ৮ হাজার ৮৯১ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সক্ষমতার অন্তত ৩ হাজার মেগাওয়াট অব্যবহৃত থাকছে।
শিল্পমালিকরা জানান, বেসরকারিভাবে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উত্পাদিত হচ্ছে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট। অর্থাত্ গ্রিডভিত্তিক উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের পুরোটাই তারা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু ভোল্টেজ ও ফ্রিকোয়েন্সি সমস্যার কারণে তারা কারখানার ইলেক্ট্রনিক-ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী গ্রিড বিদ্যুতে চালালেও উত্পাদন কার্যক্রম বা মেশিন পরিচালনা করেন ক্যাপটিভ বিদ্যুতে।
শিল্পমালিকরা বলছেন, জাতীয় গ্রিড থেকে কাঙ্খিত ভোল্টেজ ও ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুত্ না পাওয়ায় দেশের শিল্প-কারখানাগুলোকে এখনও জেনারেটরভিত্তিক তথা ক্যাপটিভ পাওয়ারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কেননা সরকারি বিতরণ কোম্পানিগুলো তা সব সময় নিশ্চিত করতে পারছে না।
তড়িৎ প্রকৌশলীরা বলছেন, আদর্শ ব্যবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস-বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখে শিল্প খাত। কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে এর উল্টোটা। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ধারিত হয় আবাসিক খাতের ব্যবহারের ওপর। নিরবিচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুেসবা নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই গ্রিড বিদ্যুৎ নেবে। কেননা ক্যাপটিভের চেয়ে গ্রিড বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
সাধারণত গ্রীষ্মের তুলনায় শীতে বিদ্যুতের চাহিদা অর্ধেকে নেমে আসে। ফলে অনেক বিদ্যুেকন্দ্র বসিয়ে রাখতে হয়। এমন প্রেক্ষাপটে শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কিভাবে বাড়ানো যায়, সে উপায় খুঁজছে বিদ্যুত্ বিভাগ। এর অংশ হিসেবে প্রণোদনা দিয়ে হলেও শিল্প খাতে ক্যাপটিভ পাওয়ারের ব্যবহার কমিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে শিল্পমালিকদের উত্সাহ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনে শিল্প এলাকায় আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা, বিদ্যুতের মূল্যহার পুনর্নির্ধারণসহ নানা পদক্ষেপও নিতে পারে বিদ্যুৎ বিভাগ। গত রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সার্বিকভাবে ক্যাপটিভ বিদ্যুতের উপযোগিতা অনেকটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই গ্রিড বিদ্যুত্ ব্যবহারের জন্য শিল্পমালিকদের আহবান জানাচ্ছি। মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে।