Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নোয়াখালীতে বছরের শুরুতেই ৩৯ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৪

জামশেদুল রাহমান, সেনবাগ প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:০৮ PM
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:০৯ PM

bdmorning Image Preview


নোয়াখালীতে বছরের শুরুতেই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। জেলার সড়ক, মহাসড়কগুলো মৃত্যু দূতে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটনা ঘটছে।

বছরের শুরুতেই গত ৩৯ দিনে জেলার বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্নচর ও হাতিয়া উপজেলায় দুর্ঘটনায় অন্তত ২৪ নিহত ও অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণহানী ঘটেছে সোনাপুর-মাইজদী, চৌমুহনী-ফেনী আঞ্চলিক সড়কে। আর সড়কে প্রাণ ঝরে অনেকের পরিবার হচ্ছে নি:স্ব, অনেকে আহত হয়ে অকালে বরণ করছে পঙ্গুত্ব। 

অদক্ষ ও মাদকসেবী চালক, ড্রাইভারদের প্রতিযোগীতা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সরু সড়কসহ নানা কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জেলা, উপজেলা প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কোন কাজে আসছে না। এমতাবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে পিকআপ-ট্রাক্টর মুখোমুখি সংষর্ষে ১জন নিহত হয়েছে। উপজেলার বসুরহাট কবিরহাট সড়কের দিনার দোকান নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থলে ট্রাক্টর চালকের হেলপার সেলিম (২৫) নিহত  হয়।

এ দুর্ঘটনায় চালক আবু তাহের গুরুত্বর আহত হয়। নিহত ট্রাক্টর হেলপার উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ছোটরাজাপুর গ্রামের ডুববালেদের বাড়ির আবদুল হাকিম’র ছেলে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ছাতাপাইয়া-চিলাদী সড়কের মুন্সিবাড়ি নামক স্থানে মাটিবাহী ট্রাক্টর উল্টে মোঃ আবু জাহের (২৫) নামের এক ট্রাক্টর চালক নিহত হয়েছে। ওই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গভীর রাতে। নিহত আবু জাহের ছাতারপাইয়া গ্রামের শালী সদ্দার বাড়ির রুহুল আমিনের ছেলে। 

গত ৪ ফেব্রুয়ারি বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আরেফিন তারেক (২৪) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত তারেক একলাশপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের জোবেদার ব্যাপারীর বাড়ির বাহার উদ্দিনের ছেলে।

গত ২৪ জানুয়ারি নোয়াখালী কবিরহাট পৌর এলাকার জৈনদপুর রাস্তার মাথা এলাকায় পিকআপ অটোরিক্সার মুখোমুখি সংর্ঘষে মোঃ গোলাপ মাওলা (৩০) নামরে এক দিনমজুর নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত আরো ৫ জন। 

গত ২৩ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী সড়কে ট্রাকের চাপায় নিহত ৭ জনের মধ্যে একই পরিবারের ৬ জনের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। তাঁরা উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়ানের জগদীশপুর গ্রামের মিনার বাড়ির বাসিন্দা। নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের রতনপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, নিহত শাহ আলমের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী নাদিম মাহমুদ অন্তরকে মঙ্গলবার  রাতে লক্ষ্মীপুরের সাদারঘর এলাকায় দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে আহত করেন। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত নাদিমকে দেখতে তার পারিবারের লোকজন বুধবার সকালে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে বেগমগঞ্জের গ্রামের বাড়ি থেকে চন্দ্রগঞ্জ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলো।

সিএনজি অটোরিক্সাটি রতনপুর ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র  বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর রাস্তার পাশে উল্টে যায় । এতে সিএনজি অটোরিক্সাটি ধুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় সিএনজিতে অটোরিকশার যাত্রী শাহ আলম (৫০), তাঁর স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫), নাছিমার বোন রোকেয়া বেগম (৩৫), নাছিমার মা শামছুন নাহার (৬০), রোকেয়ার ছেলে রুবেল (১১), শাহ আলম, নাছিমা দম্পতির ছেলে অমিত (৮) ও সিএনজি আটোরিকশার চালক লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের রামকৃষ্ণ পুর গ্রামের গাঁছি বাড়ির বাসিন্দা নুরু ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

গত ২১ জানুয়ারী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মিরওয়ারিশপুর এলাকায় হিমাচল সার্ভিসের যাত্রীবাহী একটি বাস সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে দুই নারীসহ চারজন নিহত হয়। জানা যায়, সোনাইমুড়ি-চৌমুহনী সড়কের মিরওয়ারিশপুর এলাকার রাশেদিয়া মাদ্রাসার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

গত ১৭ জানুয়ারী রাতে সেনবাগ উপজেলার মোহম্মদপুর ইউনিয়নে ট্রাকচাপায় জহিরুল ইসলাম কচি (৩০) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। এ সময় আহত হয় মোটরসাইকেলের আরো দুই আরোহী। 

গত ১৬ জানুয়ারী রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার নোয়াখালী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কের জমিদারহাট সংলগ্ন বড় পোল এলাকায় সুগন্ধা দ্রুতযান সার্ভিসের যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পাশ্ববর্তি খালে পড়ে ঘটনাস্থলে  জন ও হাসপাতালে নেয়ার পর আরো ২ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন  আহত হয়। 

গত ১৩ জানুয়ারী দুপুরে নোয়াখালীর হাতিয়ায় যাত্রীবাহী জীপগাড়ি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই  মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ও ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন। উপজেলার ওছখালী-তমরদ্দি সড়কের খবির মিয়ার বাজার নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আরিফুল ইসলাম রাফুল হাতিয়ার চর কেলাশের তাজুল ইসলামের ছেলে ও মো. ইউছুফ একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের  ছেলে। 

গত ১১ জানুয়ারী রাতে চাটখিল থানা এলাকায় পিকআপভ্যানের ধাক্কায়  এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। 

গত ৯ জানুয়ারী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মোটরসাইকেল-ক্যাভার্ড ভ্যান সংঘর্ষের ঘটনায় এক কাতার প্রবাসী মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ও অপরজন আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে বেগমগঞ্জ উপজেলার ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের মিয়ারপোল নামকস্থানে।

নিহত মোটরসাইকেল আরোহী মো: আজমির হোসেন (৩০) এর বাড়ি নোয়াখালীর চরমটুয়া ইউনিয়নে। সে ওই ইউনিয়নের ভর্মপুর গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির মমিন উল্লা পাটোয়ারীর ছেলে এবং আহত অপর আরোহী মো: হাসান একই বাড়ির মোহাম্মদ উল্লা পটোয়ারীর ছেলে। 

গত ৭ জানুয়ারী দুপুরে সোনাইমুড়ি-ছাতারপাইয়া সড়কের বিজয়নগর এলাকায়  পিকআপভ্যান চাপায় হাসিনা বেগম (৫৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। 

এছাড়াও নোয়াখালী কবিরহাট পৌর এলাকার জৈনদপুর রাস্তার মাথা এলাকায় পিকআপ অটোরিক্সার মুখোমুখি সংর্ঘষে মোঃ গোলাপ মাওলা (৩০) নামরে এক দিনমজুর নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ৫ জন। 

সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ জানতে নোয়াখালী জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) সাখাওয়াত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নানা কারণে সড়কদুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি স্বল্প গতির যানবাহন চলাচল করা। সড়ক-মহাসড়ক থেকে স্থলগতির যানবাহন তুলে দিলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। আমাদের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকেও দুর্ঘটনা রোধে সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ড্রাইভারদের সচেতনার চেষ্টা চলছে। 

Bootstrap Image Preview