বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সচেতনতা তৈরির জন্য গত চার বছর আগে ''হর্ন হুদাই বাজায় ভুদাই'' ক্যাম্পেইন শুরু করেন মমিনুর রহমান রয়েল। সড়কে চলাচলকারী গাড়ির চালকরা প্ল্যাকার্ড বা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণী ও তরুণদের সাধুবাদ জানাচ্ছেন আবার কেউ বা লজ্জায় মুখ লুকানোর চেষ্টা করছেন। শব্দ দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে এমন ব্যানার নিয়ে একাই ক্যাম্পেইন শুর করেছেন তিনি।
কি লেখা রয়েছে এই প্ল্যাকার্ডে?
তাদের প্ল্যাকার্ডে রয়েছে চার শব্দের বাক্যটি দেখেই বুঝতে বাকি থাকে না তাদের উদ্দেশ্য কী?
উদ্যোগের শুরুর কথা জানিয়ে রয়েল বলেন, ‘শুরুটা চার বছর আগে। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঢাকা এমন কোনও শহর না যেখানে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে আপনার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কেউ দাঁড়িয়ে থাকবে। এত জনবহুল একটা শহরে অযথা হর্ন বাজানোর দরকার নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে স্টাডি করেছি, যারা এক্সপার্ট তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অতিরিক্ত হর্নের কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মানুষের টেম্পারমেন্ট কমে যায়, উচ্চ রক্তচাপ হয়, গর্ভবতী মায়ের সন্তান ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ক্রমাগত আমাদের এই শহরটা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে যার একটি কারণ এই অকারণ হর্ন। যখনই আমি দেখি শব্দের মাত্রা ৭০-৭৫ বা ৮০ ডেসিবল হয়ে গেছে তখনই আমি ব্যানারটা খুলে দাঁড়িয়ে যাই। এত করে কিছুটা হলেও শব্দ কমে। এরপর আমি আমার পথে হাঁটা শুরু করি। এভাবেই চলছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৬০ ডেসিবল। শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবলে গেলে শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
রয়েল বলেন, একদিন আমার মেয়েকে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়াই কিছুক্ষণ পড়ে হর্নেও শব্দে ও উঠে যায়। অনাকাঙ্খিত একটা শব্দ ওর ভেতরে একটা ভয় তৈরি করে। আমার মেয়ের ওই ঘটনার পরে আমি আরো শক্তভাবে এই ক্যাম্পেইনে নামলাম।
ইতোমধ্যে রাস্তায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই ক্যাম্পেইন। তিনি জানান, চালক পথচারী সবাই খুব সাড়া দেয়, কেই কেউ এসে ব্যানার ধরে দাঁড়ায়। আবার কেউ কেউ ছবি তোলে। এটা খুব মজার। ভোদাই মানে তো বোকা। যেই হর্ন দেয়, পাশ থেকে লোকজন তখন সেই হর্নদাতার দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন সে এমনিতেই হর্ন বন্ধ করে দেয়। কারণ কেউ ভোদাই হতে চায় না।
মমিনুর রহমান রয়েল জানান, তিনি অফিস শেষ করে প্রতিদিন ১০/১৫ মিনিট করে সময় দেন। এক মিনিট করে হলেও এই ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। প্রথম অবস্থায় একা শুরু করলেও এখন সচেতন অনেকেই এই ক্যাম্পেইনে যোগ দিচ্ছেন নিজেদের আগ্রহেই।
তিনি বলেন, মানুষ এই ব্যানার দেখলে আর হর্ন না বাজালেও ব্যানার পার করে সামনে চলে গেলেই আর মনে থাকে না। তাই এই ব্যানারটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে, প্রত্যেকটি স্থানে লাগানো উচিত।