নিজের স্ত্রীর বহুগামিতার অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন হতাশ ও অভিমানী স্বামী চিকিৎসক আকাশ। সেখানে আকাশ বলার চেষ্টা করেছেন তিনি বিয়ের কয়েকদিন আগে জানতে পারেন বিভিন্ন ছেলের সাথে হোটেলে রাত কাটায় তার প্রেমিকা। এরপরেও সব ভুলে বিয়ে করে শুরু করেন সংসার। এর কিছুদিন পরে আবার জানতে পারে নতুন কিছু পরকীয়া প্রমিকদের সাথে রাত কাটাচ্ছে তার স্ত্রী। এতকিছু সহ্য না করতে পেরে অবশেষে নিজের জীবন দিয়ে দিলেন।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ৪টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ডাক্তার মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। সেখানে নিজের আত্মহত্যার কথা জানান তিনি।
স্ট্যাটাসে নিজের স্ত্রীর একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা এবং ছবি ও এসএমএসের স্ক্রিন শর্ট পোস্ট করেন তিনি। পোস্টে আত্মহত্যার জন্য নিজের বউকে দায়ী করেন। পাশাপাশি শ্বশুর শাশুড়িকেও দায়ী করেন তিনি।
আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আব্দুস সবুরের ছেলে। তিনি এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস পড়ছিলেন।
নিহতের খালাতো বোন শেখ লিমা থাকেন এই বাসার চার তলায়। তিনি জানান, তিন তলায় থাকতেন আকাশ। ভোর ৫টার দিকে খালা জোবায়দা খানম আকাশ ভাই এর রুমে গিয়ে দেখতে পান তিনি বাথরুমের কাছে মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। এ সময় তার অবস্থা ছিলো গুরুতর। বাথরুমে বেশি কিছু সিরিঞ্জ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এরপর আমরা তাকে গাড়িতে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
লিমা জানান, মুস্তফা মুরশেদ আকাশ ডাক্তার ছিলেন। তিনি কোন হাসপাতালে জয়েন্ট করেননি। নগরীর চক বাজারের থ্রি ডক্টরস নামের একটি কোচিং সেন্টারের মালিকদের একজন ছিলেন তিনি। সেখানেই পড়াতেন।
লিমা আরও জানান, ১৮ জানুয়ারি আমার বিয়ে হয়। আমার বিয়ে উপলক্ষে ১৪ জানুয়ারি আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসেন ভাবি তানজিলা চৌধুরী হক মিতু। দুই মাস তার বাংলাদেশে থাকার কথা।
তিনি পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে জানান, আকাশ ভাই এর নির্দেশ অমান্য করে রাত ৪টার দিকে ভাবি তার বাবার পাঁচলাইশের বাসায় চলে যান। আকাশ ভাই ভাবিকে বলেছিলেন, তুমি চলে গেলে আমি আত্মহত্যা করবো।
স্ত্রীকে নিয়ে আকাশ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন বলেও জানান তিনি।
ফেসবুকে আকাশের শেষ স্ট্যাটাস ছিলো, ‘ভালো থেকো আমার ভালোবাসা, তোমার প্রেমিকদের নিয়ে’
আকাশের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আমার সাথে তানজিলা হক চৌধূরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয় প্রচন্ড ভালবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালবাসে আমরা ঘুরে বেড়ায়, প্রেম করে বেড়ায় আমাদের ভালবাসা কম বেশি সবাই জানে। অনেকে বউ পাগলাও ডাকত। ২০১৬ তে আমাদের বিয়ে হয় বিয়ের কয়েকদিন আগে জানতে পারি কিছুদিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ০৮ ব্যচের এক ছেলের সাথে ও হোটেলে রাত কাটায় আর কত কি লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া শেষ আমাকে যেহেতু চট্রগ্রামের সবাই চিনে তাই বিয়ে কেনসেল করতে পারিনি লজ্জাতে। ওর মোবাইল এ দেখি ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যচম্যটের সাথে হোটেলে সেক্সের ছবি শতশত ছবি। আমিতো বেচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তারপর ক্ষমা চাইল শবে কদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবেনা। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে ১বছর ভালভাবেই সংসার করলাম। তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল, সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল সাথে ফেব্রুয়ারীতে ২০১৯ এ আমার ইউএস এ যাওয়ার কথা।
জানুয়ারী ২০১৯ জানতে পারি ও রিগুলার ক্লাবে যাচ্ছে মদ খাচ্চে প্যটেল নামে এক ছেলের সাথে রাত কাটাচ্ছে। আমি বারবার বলছি আমাকে ভাল না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট করনা মিথ্যা বলনা। আমার ভালবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। আমাদের দেশেতো ভালবাসায় চিটিং এর শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম আর আমি চির শান্তির পথ বেচে নিলাম। তোমাদেরও বলছি কাউকে আর ভাল না লাগলে সুন্দর ভাবে আলাদা হয়ে যাও চিট করনা মিথ্যা বলনা। আমি জানি অনেকে বিশ্বাস করবেনা এত অমায়িক মেয়ে আমিও এসব দেখে ভালবেসেছিলাম। ভিতর বাহির যদি এক হত। সবাই আমার দোষ দিবে সবকিছুর জন্য তাই ব্যখ্যা করলাম। আমার শাশুড়ী এর জন্য দায়ী এসবের জন্য, মেয়েকে আধুনিক বানাচ্ছে। একটু বেশি বানিয়ে ফেলেছে। উনি চাইলে এখনো সমাধান হত। ও মা তুমি মাফ করে দিও তোমার স্বপ্ন পূরন করতে পারলামনা। মায়ের ভালবাসার কখনো তুলনা চলেনা। বারবার বলছি ভাল না লাগলে আলাদা হয় যাও চিট করনা, মিথ্যা বলনা বিশ্বাস ভাঙ্গিওনা। হাজার হাজার ছবি আছে আরো খারাপ খারাপ দিলামনা যারা বিলিভ করবে এতেই করবে, না করলে নাই। এই ৯ বছরে বয়ফ্রেনড স্বামী স্ত্রীর মত আবার সাথে সবি করে গেল। ও আমাকে আর কি ভালবাসল? কিসের বিয়ে করল?
আমি শেষ পর্যন্ত চাইছি সব চুপ রেখে সমাধান করে অকে নিয়ে থাকতে। আমার শশুড় আর শাশুড়ী কে বারবার বলছি উনারা সমাধান করতে পারত! আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ ৯ টা বছর যাকে ১০০% ভালবাসছি, ওকে প্ররোচনা দিছে মইন মিথি নামে দুই ফ্রেন্ড ওর মা বাবা আমাকে মানসিক কষ্ট দিয়ে মারছে। আমাই এই বেইমানি মেনে নিতে পারিনাই। তারপর ও ভুলে আমি সুন্দর সংসার করতে চাইছি আমার শাশুড়ি শশুড় আর বউ নামের কলংক করতে দিলনা আমাকে প্রতি নিয়ত প্রেশার দিয়ে গেছে আমার বউ আমার মার নামে যা তা যা তা বলে গেছে। আমাকে ভাল না লাগ্লে ছেড়ে চলে যাইতে বলছি ১০০ বার। আমি বোকা ছিলাম তুমি সুখে থেক। অনেকেকে ওর ফ্যান বিলিভ করবেনা আমিঞ্জানি তবে এটাই সঠিক মরার আগে কেউ মিথ্যা বলেনা আর বাইরে থেকে মানুশের ভিতরের চেহারা বুঝা যায় না। ও সুন্দরী, পড়াই ভাল, গান পাড়ে সত্য কিন্তু ও ভাল অভিনেত্রী ভাল চিটার। যাদের ঈচ্ছা বিলিভ কবে যাদের ঈচ্ছা নাই করবেনা। তবে কাউকে ভালবেসে চিটার গিরি করনা।’
উল্লেখ্য, মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু ও তার বাবা-মা, এক বোন ও দুই প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারী) বিকেল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানায় মৃত আকাশের মা জোবেদা খানম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের মা তার পুত্রবধু তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনেছেন। মিতুর পাশাপাশি তার বাবা-মা, এক বোনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মাহবুব এবং প্যাটেল নামে মিতুর দুই প্রেমিককেও মামলায় আসামি করা হয়।’
এর আগে শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘আকাশের ফেসবুক স্ট্যাটাসে থাকা তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য স্ত্রী মিতুকে বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারী) রাত ১২টার দিকে নগরের নন্দনকানন এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বামীর অভিযোগের কিছু বিষয় স্বীকার করেছেন, আর কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন।’
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিতুর দুইটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায় আকাশের কাছে নিজের পরকীয়াসহ একাধিক সম্পর্কের জবানবন্দী দিচ্ছেন মিতু। আজ থাকছে ভাইরাল হওয়া মিতুর দ্বিতীয় ভিডিও। এই ভিডিওটি মিতু আকাশের বিয়ের ভিডিও।