Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'জলাধার রক্ষায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন প্রয়োজন'

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৪৯ PM
আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৫০ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


আজ ২ ফেব্রুয়ারি, বিশ্বব্যাপি পালিত হচ্ছে 'বিশ্ব জলাধার দিবস'। প্রতি বছর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং জনসংখ্যার চাপে জলাভূমি ও এর জীববৈচিত্র্যের প্রতি হুমকি বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ আকর্ষণে বিশ্ব জলাধার দিবস পালিত হয়। এ বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে জলাধার এবং জলবায়ু পরিবর্তন।

সর্বপ্রথম ক্যাস্পিয়ান সাগরের তীরে ইরানের শহর রামসারে ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ তারিখে রামসার কনভেনশন নামে জলাভূমির কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সাল থেকে, রামসার সচিবালয় জলাভূমির গুরুত্ব ও মূল্য সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর এ দিবসটি উদযাপন করে আসছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি) -এর ১, ২, ৫, ৬, ৮, ১১, ১৩, ১৪ ও ১৫নং লক্ষ্যের প্রায় সবগুলোই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পানিসম্পদ সংরক্ষণের প্রতি আলোকপাত করে। ক্ষুধা নিবারণ, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুপেয় পানির সরবরাহকরন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম নিয়ামক হলো পানিসম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের জলাধার রক্ষা জরুরী। পরিবেশ, কৃষি, শিল্প, খাদ্য, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, নগরায়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে পানি অপরিহার্য।

এছাড়াও বন্যা, খরা এবং ঘূর্ণিঝড় এর মত চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির প্রভাব হ্রাসে জলাভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুপরিচালিত, স্বাস্থ্যকর জলাভূমি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতকে শোষণ করে এবং শুষ্ক মৌসুমের জন্য সংরক্ষণ করে, যা জনসাধারণকে খড়া বা অনাবৃষ্টির মতো বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা সকলেই অবহিত আছি যে, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে অপরিশোধিত ও পয়ঃবর্জ্য ফেলে ভয়াবহ পানিদূষণ করা হচ্ছে অহরহ। জলাভূমি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভে পানির স্তর ক্রমেই নিচে চলে যাচ্ছে। যে কারণে সবার দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটানোর জন্য সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ছাড়াও অপরিকল্পিত নদী শাসন, বাঁধ নির্মাণ, বড় নদীগুলোর সঙ্গে ছোট নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রতিকুল পরিবেশ প্রভৃতি কারণে দেশের নদীগুলো প্রচণ্ড হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। দুঃখের বিষয় এই যে, সকল পরিকল্পনায় জলাভূমি রক্ষা করার কথা বলা হলেও কার্যত এর প্রতিফলন হচ্ছে না।

'বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০, জলাধার সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং ভরাট নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৩; প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) জলাধার সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যথাযথভাবে পরিপালন হচ্ছে না। ফলে অবৈধভাবে জলাধার ভরাটের অপকর্ম সর্বদাই চলমান। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের অন্য বড় শহরগুলোর অবস্থাও সংকটাপূর্ণ। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, বিদ্যমান আইন প্রয়োগে দূর্বলতা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও মনিটরিং-এর সীমাবদ্ধতা ও অদূরদর্শীতার কারণে দেশের অনেক জলাধার ধ্বংস হয়ে গেছে।'

জলাধার সংরক্ষণে দেশের সকল এলাকায় বিদ্যমান খাল ও জলাশয় দখল-ভরাটের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে এবং যেগুলো এরই মধ্যে অবৈধভাবে ভরাট হয়ে গেছে, সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। খাল, জলাধার দখল ও দূষণমুক্ত করার নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নেয়া ও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে বিআইপি মনে করে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সীমিত সম্পদকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুপেয় পানির চাহিদা নিশ্চিত করতে জলাশয়গুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। পানির উৎস সংরক্ষণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অভ্যন্তরীণ নীতি ও আইনের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী দেশসমূহের সাথে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক পর্যায়ে সংলাপ ও প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও নগরের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে জলাধার সংরক্ষণে বিদ্যমান আইনসমূহ যেন লঙ্ঘিত না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়।

নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিং করার পাশাপাশি বর্ষার পানি ধরে রাখারও ব্যবস্থা রাখতে হবে। বর্ষাকালে যে বিশাল জলরাশি আসে সেটা কিভাবে ধরে রাখা যায় সেই বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও জলাধার রক্ষায় একটি পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন করে সিএস এর আলোকে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) প্রযুক্তির মাধ্যমে সিএস অনুসারে নদী, খাল, হাওড়, বাওড়, পুকুরসমূহের সীমানা চিহ্নিত করে প্রকাশ করা, জলাধার রক্ষার আইনের বাস্তবায়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দ; জলাধার রক্ষায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিশন গঠন করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স বিশ্বাস করে।

Bootstrap Image Preview