Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৩ কেজি চাউল বিক্রি করে লটারীর টিকিট কিনলেন ছেলে, মায়ের আহজারী

খুরশিদ আলম শাওন, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:০০ PM
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:০০ PM

bdmorning Image Preview


চৌদ্দ পনের বছরের এক কিশোর লটারির টিকিট কিনলেন।ঠিক সেই সময় লটারি বিক্রির স্থানের ঠিক পূর্ব দিক থেকে একজন মহিলা কার যেনো নাম ধরে চিৎকার করতে করতে আসছেন লটারি বিক্রির গাড়ীটির নিকট। তবে মহিলাটির চিৎকার শুনে সেই কিশোর ক্রয়কৃত লটারির টিকিটটি নিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালান।

এমন দৃশ্য দেখে সেই মহিলার নিকট এর কারন জানতে চাইলে তখন তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন ও আমার ২য় ছেলে গ্রামের একটি বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ওর বাবা দিনমজুর সারাদিন কাজর্কম করে পাঁচ সদস্যর সংসার চালায়। সে লটারির টিকিট কেনার জন্য বাড়িতে আগামীকালের জন্য ভাত রান্নার তিন কেজি চাউল বিক্রি করে লটারির টিকিট কিনেছেন। তা বুঝতে পেরেই আমি তাকে তাড়া করছিলাম। কিন্তু হলো না যা হওয়ার তাই হলো। কাল আমি কি রানবো তা জানি না।

তিনি আহাজারী করে বলেন, নেকমরদ নামে মেলা হচ্ছে হোক এখানে কেন লটারির টিকিট বিক্রি করতে হবে। পরে গ্রামের অন্য মহিলারা তাকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

ঘটনাটি ঠাকুরগাওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বাড়া নামক এলাকায় ঘটে। ছেলেটির ডাক নাম সৌরভ সে ঐ গ্রামের সোবহানের ছেলে।

এ সময় পাশ থেকে আরেক নারী অভিভাবক বলতে থাকেন, সরকার একদিকে দেশের উন্নয়ন করছে আরেক দিকে এসব লটারির অনুমতি সমাজটাকে ধ্বংস করছে। আমরা এটা আশা করি না। আর এ লটারির টিকিট বিক্রি হচ্ছে উপজেলার নেকমরদ ওরশ মেলার নামে।

ঠিক এভাবেই গ্রামের অলিগলি, শহর, হাট-বাজারগুলোতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে 'মাথাই নষ্ট মামা। প্রতিদিন কয়েকটি দামি মোটরসাইকেলসহ কয়েক লাখ টাকার পুরস্কার। ভাগ্যে থাকলে আপনিও পেয়ে যেতে পারেন লোভনীয় পুরস্কার।' 

এভাবেই লটারি টিকিট বিক্রির জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।এভাবে তাক লাগিয়ে মানুষকে পুরস্কার জেতার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ওরশ মেলার আয়োজকেরা। নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সহজেই তাদের এই ফাঁদে পা দিচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের নেকমরদ-বালিয়াডাঙ্গী মহাসড়ক এলাকায় গত ১৩ জানুয়ারী থেকে চলছে ওরশ মেলা। ২৮ জানুয়ারী থেকে ওই মেলায় শুরু হয়েছে লটারী বিক্রি। আয়োজকেরা দিনের বেলা মূল্যবান ও আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মাইকিং করছে। রাতের বেলা ড্রয়ে কিছু না জুটলেও দমছে না তারা। ভাগ্য জয়ের আশায় আবারও টিকিট কিনছে। এভাবে যত টিকিট বিক্রি হচ্ছে, তত পকেট ভারী হচ্ছে আয়োজকদের। এতে পকেট খালি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। 

স্থানীয় লোকজন বলেন, লটারি প্রতিটি টিকিটের দাম ২০ টাকা। টিকিট বিক্রি করতে প্রতিদিন সকালে মেলা চত্বর থেকে প্রায় ১৫০টিরও বেশি ইজিবাইক ছুটছে উপজেলা সদরসহ আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন ৭ থেকে ১১ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। রাত সাড়ে ১০টায় শুরু হয় ড্র। ড্র সরাসরি স্থানীয় ক্যাবল টিভিতে সম্প্রচার করা হচ্ছে।

জানা গেছে, র‌্যাফেল ড্রর দামি পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তিন অথবা পাঁচটি মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। ওই তিনটি মোটরসাইকেলের দাম পড়ে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে আছে বাইসাইকেল, শাড়ি, লুঙ্গি, মুঠোফোন, বৈদ্যুতিক পাখা প্রভৃতি। এসব কিনতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সে হিসাবে মেলার র‌্যাফেল ড্রর পেছনে আয়োজকদের খরচ সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী সব খরচ বাদে আয়োজকদের প্রতিদিন ৩-৪ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে।

উপজেলার চৌরাস্তা বাজারে ইজিবাইকে করে মুক্তা লটারির টিকিট বিক্রি করছিলেন সালাম। তিনি তালিকা দেখিয়ে বলেন, শুক্রবার পুরস্কার হিসেবে থাকবে দামি দামি পুরস্কারসহ ৫টি মোটরসাইকেল। গত বুধবার প্রথম পুরস্কার ৩টি মোটরসাইকেল ও শেষে ৩টি মোটরসাইকেল সহ ৪৪টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে পুরস্কারের সংখ্যা বাড়বে। প্রতিদিন তিনি ইজিবাইকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে আড়াই থেকে চার হাজার টিকিট বিক্রি করেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। 


 
 

Bootstrap Image Preview