ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৪৭ তম এমবিবিএস ব্যাচের ডা. মোস্তফা মোর্শেদ আকাশ। ফেসবুক স্ট্যাটাসে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়ার পিছনে তার স্ত্রীর পরকীয়াকে দায়ী করেন। সেই সাথে দায়ী করেন তার শ্বাশুড়ীকেও।
আত্মহত্যার দুই ঘণ্টার তিনি তার মৃত্যুর পূর্বের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দিয়ে গেছেন। সেই হৃদয়বিদারক ফেসবুক স্ট্যাটাসটি বিডিমর্নিং পাঠকদের জন্য হুবুহু তোলে ধরা হলো:
আমার সাথে তানজিলা হক চৌধূরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয় প্রচন্ড ভালবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালবাসে আমরা ঘুরে বেড়ায়, প্রেম করে বেড়ায়। আমাদের ভালবাসা কম বেশি সবাই জানে। অনেকে বউ পাগলাও ডাকত।
২০১৬ তে আমাদের বিয়ে হয় বিয়ের কয়েকদিন আগে জানতে পারি কিছুদিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ০৮ ব্যচের এক ছেলের সাথে ও হোটেলে রাত কাটায়.. আর কত কি লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া শেষ আমাকে যেহেতু চট্রগ্রামের সবাই চিনে তাই বিয়ে কেনসেল করতে পারিনি লজ্জাতে। ওর মোবাইল এ দেখি ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যচম্যটের সাথে হোটেলে সেক্সের ছবি শতশত ছবি।
আমিতো বেচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তারপর ক্ষমা চাইল শবে কদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবেনা। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে ১বছর ভালভাবেই সংসার করলাম। তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল, সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল সাথে ফেব্রুয়ারীতে ২০১৯ এ আমার ইউএস এ যাওয়ার কথা।
জানুয়ারী ২০১৯ জানতে পারি ও রিগুলার ক্লাবে যাচ্ছে মদ খাচ্চে প্যটেল নামে এক ছেলের সাথে রাত কাটাচ্ছে। আমি বারবার বলছি আমাকে ভাল না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট করনা মিথ্যা বলনা। আমার ভালবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। আমাদের দেশেতো ভালবাসায় চিটিং এর শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম আর আমি চির শান্তির পথ বেচে নিলাম। তোমাদেরও বলছি কাউকে আর ভাল নালাগলে সুন্দর ভাবে আলাদা হয়ে যাও চিট করনা মিথ্যা বলনা।আমি জানি অনেকে বিশ্বাস করবেনা এত অমায়িক মেয়ে আমিও এসব দেখে ভালবেসেছিলাম। ভিতর বাহির যদি এক হত।সবাই আমার দোষ দিবে সবকিছুর জন্য তাই ব্যখ্যা করলাম।
আমার শাশুড়ী এর জন্য দায়ী এসবের জন্য, মেয়েকে আধুনিক বানাচ্ছে।একটু বেশি বানিয়ে ফেলেছে। উনি চাইলে এখনো সমাধান হত।
ও মা তুমি মাফ করে দিও তোমার স্বপ্ন পূরন করতে পারলামনা। মায়ের ভালবাসার কখনো তুলনা চলেনা।
বারবার বলছি ভাল না লাগলে আলাদা হয় যাও চিট করনা, মিথ্যা বলনা বিশ্বাস ভাঙ্গিওনা। হাজার হাজার ছবি আছে আরো খারাপ খারাপ দিলামনা যারা বিলিভ করবে এতেই করবে , না করলে নাই।এই ৯ বছরে বয়ফ্রেনড স্বামী স্ত্রীর মত আবার সাথে সবি করে গেল।
ও আমাকে আর কি ভালবাসল? কিসের বিয়ে করল?
আমি শেষ পর্যন্ত চাইছি সব চুপ রেখে সমাধান করে অকে নিয়ে থাকতে। আমার শশুড় আর শাশুড়ী কে বারবার বলছি উনারা সমাধান করতে পারত! আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ ৯টা বছর যাকে ১০০% ভালবাসছি, ওকে প্ররোচনা দিছে মইন মিথি নামে দুই ফ্রেন্ড ওর মা বাবা আমাকে মানসিক কষ্ট দিয়ে মারছে। আমাই এই বেইমানি মেনে নিতে পারিনাই। তারপর ও ভুলে আমি সুন্দর সংসার করতে চাইছি আমার শাশুড়ি শশুড় আর বউ নামের কলংক করতে দিলনা। আমাকে প্রতি নিয়ত প্রেশার দিয়ে গেছে আমার বউ আমার মার নামে যা তা যা তা বলে গেছে।
আমাকে ভাল না লাগ্লে ছেড়ে চলে যাইতে বলছি ১০০ বার। আমি বোকা ছিলাম তুমি সুখে থেক। অনেকে ওর ফ্যান বিলিভ করবেনা আমি জানি, তবে এটাই সঠিক মরার আগে কেউ মিথ্যা বলেনা আর বাইরে থেকে মানুষের ভিতরের চেহারা বুঝা যায় না। ও সুন্দরী, পড়াই ভাল, গান পাড়ে সত্য কিন্তু ও ভাল অভিনেত্রী ভাল চিটার।যাদের ঈচ্ছা বিলিভ কবে যাদের ঈচ্ছা নাই করবেনা। তবে কাউকে ভালবেসে চিটার গিরি করনা।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়কের ২০ নম্বরে নিজ বাসা থেকে ওই চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। তিনি এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস পড়ছিলেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত নায়েক হামিদ উল্লাহ জানান, সকাল ৬টার দিকে ডা. মোস্তফা মোরশেদকে হাসপাতালে আনলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডা. মোস্তফা শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেছেন। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
তবে স্বজনরা জানান, পারিবারিক বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরে রাতে আকাশ অভিমানে শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্য করেছেন।
তার মৃত্যুতে পরিবার আত্মীয় স্বজন সহ শোকের ছায়া নেমে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। ডা. মোস্তফা মোর্শেদ আকাশের অকাল মৃত্যুতে মেডিভয়েস পরিবার গভীর ভাবে শোকাহত।