Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবশেষে শপথ নিচ্ছেন গণফোরামের দুই এমপি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৮:৪৯ PM
আপডেট: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৮:৪৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নির্ধারিত নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শপথ নেবেন মৌলভীবাজার-২ থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান।

এর মধ্যে সুলতান মনসুর গণফোরামের প্রার্থী হলেও নির্বাচিত হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে। অপরদিকে সিলেট-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার প্রার্থিতা হাইকোর্ট বাতিল করলে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে সমর্থন দেয় বিএনপি।

রোববার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নির্বাচিত এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা দু’জন শপথ নেবো। তবে তাড়াহুড়োর কিছু নাই। এখনও সময় আছে। ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিলেই হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে সুলতান মনসুর বলেন, আমি অসুস্থ, হাতে ফ্র্যাকচার। ব্যান্ডেজ লাগানো। সুস্থ হতে এখনও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। শপথের তো এখনও বেশ সময় আছে। বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও সিদ্ধান্ত নেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তো সবাই আলাদা আলাদা দল। আমাদের সিদ্ধান্ত ‘অবশ্যই পজেটিভ’ হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য শপথ নেবেন। গতকাল শনিবার গণফোরামের বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, সভায় দলের নবনির্বাচিত দুই সাংসদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান প্রকৃত অর্থে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সংসদে থাকলে অনেক তথ্য জানতে পারবেন। প্রাপ্ত তথ্য তারা দলীয়ভাবে বাইরে তুলে ধরতে পারবেন।

রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় শিশুকল্যাণ পরিষদে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় কমিটি ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি এর আগে জানিয়েছে, নির্বাচনে তাদের জোট থেকে বিজয়ী নেতারা শপথ নেবেন না।

দুই যুগ আগে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে ড. কামাল হোসেন গণফোরাম গঠনের পর এবারই প্রথম দলটি থেকে দু'জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে জয়ী হয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

এছাড়া সিলেট-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে গণফোরামের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে জয়ী হয়েছেন গণফোরামের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোকাব্বির খান।

বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় ২৩ জন নেতা বক্তৃতা দেন। তাদের বেশির ভাগই দলের নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার পক্ষে মতামত দেন।

তারা বলেছেন, শুধু সংসদের বাইরে নয়, সংসদের ভেতর থেকেও সরকারের সমালোচনা করা প্রয়োজন। এ যুক্তিতে শপথ নিতে চান তারা। নবনির্বাচিত দুই এমপিও শপথ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি ও মত দেন। তবে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ড. কামাল হোসেনের ওপর ছেড়ে দেন। দলের সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা তারা মেনে নেবেন বলেও জানান।

সূত্র জানায়, বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে জামায়াতকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে মূল ভূমিকা রাখায় তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। এ সময় এক বক্তা বলেন, বিএনপি যদি জামায়াতকে পুরোপুরি পরিহার না করে, তাহলে এ ঐক্য বেশিদূর নেওয়া যাবে না।

সভায় বক্তব্য দেন গণফোরাম নেতা অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ মাহমুদ বীরপ্রতীক, ড. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, আমসা আমীন, মোকাব্বির খান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ প্রমুখ।

বর্ধিত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যদি কার্যকরভাবে কাজ করে, তাহলে সরকার চাপে থাকবে। আর সরকারের ওপর চাপ তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের এ ঐক্যের চাপ কাজে লেগেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে সেখানে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র থাকে না। এটা সংবিধানের ওপরে আঘাত।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তিনি সারাজীবন ঐক্যের রাজনীতি করেছেন। শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্ট রাখার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক থাকবেন। জনমত গঠন করার জন্য তারা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছেন। সে আন্দোলন চলছে। ভবিষ্যতে সে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।

গণফোরামের লিখিত বক্তব্যে ৩০০ আসনের এমপিকে নির্বাচিত নয় বলে দাবি করা হলে তার দলের নির্বাচিত দু'জন এমপির ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তাদের প্রার্থীরা তো বিরোধী দল থেকে বিজয়ী হয়েছেন। এ প্রতিকূল পরিবেশে বিজয়ী হওয়াটা তাদের অর্জন। তারা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

জামায়াতকে ধানের শীষের প্রতীক দেওয়ায় তিনি ঐক্যফ্রন্টে থাকবেন কি-না জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, জামায়াত ঐক্যফ্রন্টে নেই। তারা ২০ দলীয় জোটে আছে।

নবনির্বাচিত সরকারকে বিভিন্ন দেশ সমর্থন দিচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, অনেকেই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে, কিন্তু দেখবেন তাদের বক্তব্যে 'কিন্তু' রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টে থাকবেন কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ইতিবাচক হবে বলে তিনি মনে করেন। তারা আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে, তারা নির্বাচিত নন এবং যাদের নামে গেজেট প্রকাশ করেছে তারা জনগণের প্রতিনিধি নন।

তিনি বলেন, তারা এর আগে এ নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা হারানো গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আ ও ম শফিকউল্লাহ প্রমুখ।

Bootstrap Image Preview