প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৮ সালের জুন মাসের ২৩ তারিখে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সভায় বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোনো ভিক্ষুক থাকবে না। আমরা ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব। জাতির পিতা বলেছিলেন- ভিক্ষুক জাতির কোনো সম্মান থাকে না। কিন্তু আসলে কি আমরা ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ২০১৯ সাল এসেও শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকেই ভিক্ষুকমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
উল্টো ৮ বছর আগে ২০১১ সালে ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষে ভিক্ষুক পুনর্বাসণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঢাকার যে স্থানগুলোকে ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছিল সেখানে বেড়েছে এঁর প্রবৃত্তি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ২০১১ সালে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠির পুনর্বাসণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ভিক্ষুকের পুনর্বাসনের কথা থাকলেও এই প্রজেক্ট সাফল্যের মুখ দেখার আগেই মাত্র ছয় মাসের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়ে।
তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাত্র ৬৬ জন ভিক্ষুকের পুনর্বাসন করতে সক্ষম হলেও তাঁদের বেশি ভাগই ফিরে এসেছে ভিক্ষাবৃত্তিতে। তাঁদের একজন নাম হাজী ফারুক মিয়া।
পায়ে ব্যান্ডেজ, দুই হাতে ক্র্যাচার নিয়ে রাজধানীর বাংলামটর, ফার্মগেট, শান্তি নগর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ভাগ করে ভিক্ষা করেন । তিনি ২০১১ সালে ভিক্ষুকদের পূনর্বাসন প্রকল্পে থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ভ্যান পেলেও বছর না ঘুরতেই চার স্ত্রী ও ১০ সন্তানের জনক আবারো ফিয়ে আসেন আগের পেশাতে।
কেন আবার ফিরে আসলেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ২০১১ সালে আমি যখন সরকারের কাছ হতে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য যে অর্থ পেয়েছিলেন তাঁতে তাঁর ৩টি সমিতির কিস্তির টাকা আসতো না। তাই ভ্যান ভাড়া দিয়ে আবার ঢাকার রাস্তার ভিক্ষা শুরু করে।
*সমিতির কিস্তি ?
আমার দুই ছেলেকে কুয়েত পাঠানোর জন্য গ্রামের ২ টা সমিতি থেকে আমার ঋনি আছি এবং আর কিস্তিতে জমি কিনেছিলাম তাঁর জন্য একটা কিস্তি দিতে হত। যার পরিমাণ সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা ছিল। তাই আবারও ফিরে আসি এই পেশাতে।
*আপনার নামের শুরুতে হাজী আছে, আপনি কি হজ্জ করেছেন ?
আমার ছেলেরা আমার নামে হজ্ব করেছে তাই নামের সামনে হাজী লাগিয়েছি। আল্লাহ্ যদি চায় ২০ সালে বড় হজ্বে যাব।
*জমির কিস্তির বিষয়টি বুঝিয়ে বলতেন?
২০১০ সালে ঢাকার বেড়াইতে কিস্তির মাধ্যমে ৫ শতাংশ জমি রেখে ছিলাম সে জন্য ২ হাজার টাকা দিতে হত সপ্তাহে।
*আপনার তো বড় পরিবার, তাহলে কিভাবে চলে আপনার সংসার?
সংসার খরচের টাকা দিতে হয় না আমার। বিদেশের ২ ছেলে প্রতি মাসে টাকা পাঠায় এবং গ্রামের জমিতে চাষাবাদ করে ৩ ছেলে । তাঁদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই আমার সংসার চলে যায়। বাকি ৪ মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।
*আপনার বউরা কোথায় থাকে ?
ছোট বউ, ছোট মাইয়া আর আমি ঢাকাতে থাকি। অন্য ৩ বুড়িসহ ছেলেদের সাথে গ্রামেই থাকে।
*আপনাকে তো আল্লাহ্ ভালোই অর্থ দিয়েছে , তাহলে কেন ভিক্ষা করছেন ?
দীর্ঘদিন এ পেশা থাকার কারণে অন্যকিছুতে মন বসে না। তাছাড়া যার হাত ধরে এ পেশাতে এসেছেন, সে (গুরু) ভিক্ষা করে ঢাকার বছিলাতে ৪ তলা ভবন করেছে। আমার স্বপ্ন ভিক্ষা করেই ঢাকা শহরে একটি বাড়ি করবো। তার জন্য একটা সরকারি ব্যাংকে কিছু টাকাও জমিয়েছি (যার পরিমাণ সে বলতে চায়নি)।
কথোপকথনে উঠে আসে ঢাকার ৫ শতাংশ জমি ছাড়াও তাঁর গ্রামে বাড়িতে ২ বিঘা জমি, ৬ টি গরু এবং গ্রামের বাজারে ৩টি দোকান আছে।