Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কারণে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে থাকছেন না মোশাররফ ও মওদুদ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:৫২ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:৫২ PM

bdmorning Image Preview


জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্টিয়ারিং কমিটিতে পরিবর্তন আসছে। আগের কমিটির দুই সদস্য বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ কমিটিতে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের স্থলে নেয়া হচ্ছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর দুই সদস্যকে।

সূত্র জানায়, নীতিনির্ধারণে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের কর্তৃত্ব ভালো চোখে দেখছেন না বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা মনে করছেন ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির মত খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। অনেক সময় ফ্রন্ট নেতাদের ছাড় দিতে গিয়ে বিএনপিকে মাসুল দিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের পেটে ঢুকে পড়বে বিএনপি।

এসব কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের দূরত্ব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে। বিএনপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একসঙ্গে পথচলা মেনে নিতে পারছেন না। এমনকি তারা বিএনপির হাইকমান্ডকে বিষয়টি ভেবে দেখার কথা বলে রেখেছে।

সূত্র জানায়, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকার বিষয়ে নিজেদের অনীহার কথা দলের হাইকমান্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন। হাইকমান্ডও সব কিছু বিবেচনায় এতে সায় দিয়েছে। তাদের স্থলে নতুন দুজনকে স্টিয়ারিং কমিটিতে যুক্ত করা হচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হচ্ছে স্টিয়ারিং কমিটি। এ কমিটির সদস্যরা আলোচনা করেই যে কোনো সিদ্ধান্ত নেন। এতে বিএনপিসহ শরিক সব দলের তিনজন করে প্রতিনিধি আছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির অভ্যন্তরীণ জটিলতা এবং টানাপোড়েনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে থাকা নিয়ে নিজেদের অনীহা প্রকাশ করেন। এ কারণে তারা নির্বাচনপরবর্তী ঐক্যফ্রন্টের কোনো বৈঠকে উপস্থিত হননি।

তাদের এমন মনোভাব লন্ডনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হলে দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খানকে স্টিয়ারিং কমিটির দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের আগামী বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ ১৭ জানুয়ারি ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিই উপস্থিত ছিল না। তখন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খান যানজটের কারণে আসতে পারেননি।

জানা গেছে, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শুরু থেকেই বিএনপির প্রতি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মনোনয়ন ইস্যুসহ নানা বিষয়ে ‘চাপ’ মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি বিষয়টি নিয়ে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এবং বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলাপও করেছেন।

এমনকি বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে মোশাররফের একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও পড়ে। যাতে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের টানাপোড়েনের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে।

বিএনপির রাজনীতিতে খন্দকার মোশাররফ ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গাঁটছড়া পুরনো। ‘ম’ অদ্যাক্ষরের এ দুই নেতা প্রায়ই দলীয় নানা ইস্যুতে একই মত দিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে মতের অমিল খুব একটা পাওয়া যায় না। অতিসম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দলের কাউন্সিল নিয়ে একই সুরে কথা বলেন এই দুই নেতা। নতুনভাবে বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন তারা।

গত শুক্রবার বিকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপিকে এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। ২০০৮ সালে এমনিভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পরাজিত হয়েছিলাম। তারপর কিন্তু আমরা দলের কাউন্সিল করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম এবং সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীরা সাহসের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। আমরা যারা ব্যর্থ বলে পরিচিত হয়েছি তাদের পদ ছেড়ে দিতে হবে। তরুণদের জায়গা করে দিতে হবে।’

একই সুরে কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও। তার ভাষ্য, ‘যারা এই দুঃসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের সামনের দিকে এনে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। দরকার হলে আমরা যারা আমাদের বয়স হয়ে গেছে আমরা সরে যাব তারপরেও এই দলটাকে তো রাখতে হবে। এই কাজ আমাদের কয়েক মাসের মধ্যেই করতে হবে। তাহলেই আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রতি অতি নির্ভরতা এবং সাংগঠনিক নানা সিদ্ধান্ত প্রণয়নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও এই দুই নেতার কিছুটা দূরত্ব হয়েছে বলে দাবি একটি সূত্রের। যদিও এ বিষয়ে মহাসচিব কিংবা খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কেউ-ই মুখ ফুটে কিছু বলেন নি।

এদিকে ব্যারিস্টার মওদুদ কেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে থাকতে চাইছেন না তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে খন্দকার মোশাররফের প্রতি সংহতি জানাতেই তিনি এই কমিটিতে থাকতে চাইছেন না।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্যকে নতুন করে স্টিয়ারিং কমিটিতে নেয়ার বিষয়ে শুনেছি। বিএনপির পক্ষ থেকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে এ রকম একটি কথা বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খানকে স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য করার বিষয়টি স্বীকার করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু যুগান্তরকে বলেন, হ্যাঁ এ রকম হয়েছে। কারণ অনেক কাজ তো থাকে তাদের। এ জন্য হয়তো তারা সংখ্যাটা বাড়িয়ে নিল। তবে ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুজনের পরিবর্তে দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview