Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মানবজমিনের সাংবাদিককে হেনস্থা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:২০ PM
আপডেট: ২৪ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৩৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


সকালবেলা বাজার করতে বের হয়েছিলেন শুভ্রদেব। পথে মানুষের জটলা দেখে চোখ আটকে যায়। ১০ হাত দূরত্ব থেকে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করেন। দেখতে পান কয়েকজন পুলিশ সদস্য একজন যুবকের মোটরসাইকেলের নাটবল্টু খুলে কী যেন দেখছেন।

দৃশ্যটি দেখার কয়েক মুহূর্ত পরে ঘটনাস্থলে থাকা এসআই সালাউদ্দিন শুভ্রদেবকে ডাক দেন এবং তিনি কেন তাদের কাণ্ড দেখছেন সে বিষয়ে ধমক দিয়ে জবাব চান শুভ্রের কাছে।

পাশাপাশি তিনি কোন এলাকায় থাকেন, নাম কী, কেন সেই রাস্তা ধরে হাঁটছেন, কেন তার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না—নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন তাকে।

শেষে ওই পুলিশ সদস্য তার কাছে ইয়াবা আছে অভিযোগ তুলে শুভ্রদেবকে তল্লাশির জন্য নির্দেশ দেন। হঠাৎ পুলিশের একজন সদস্যের এমন আচরণ দেখে বিস্মিত হন তিনি। পরে কোনো কথা না বাড়িয়ে বাসায় চলে আসেন।

উপরে ঘটনাটি ঘটে ২৪ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকার ১০ নম্বর গলিতে। আর পুলিশি হেনস্তার শিকার শুভ্রদেব দৈনিক মানবজমিনের সাংবাদিক। পরে বিষয়টি তিনি থানায় অভিযোগ করলে হেনস্তাকারী পুলিশ সদস্য ঘটনাটি অস্বীকার করেন।

অন্যদিকে ঘটনাটি চেপে যাওয়ার জন্য ফোন করেছিলেন এসআই সালাউদ্দিনের সঙ্গে থাকা এসআই শংকর।

ভুক্তভোগী শুভ্রদেব বলেন, ‘তখন আমি রাস্তা দিয়ে বাজারের উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। দেখি ১০ হাত দূরত্বে কিছু মানুষের জটলা, তারা দাঁড়িয়ে কী যেন দেখছে। আমিও দূর থেকে বিষয়টি দেখে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। তারা কেন দাঁড়িয়ে আছে, আর এত মানুষের জটলা কেন? দেখলাম চার জন পুলিশ একজন যুবকের একটি মোটরসাইকেলের নাটবল্টু খুলে সেট করতেছে। পাশে সেই যুবক দাঁড়ানো।’

আমি যেই তাকাইছি দেখলাম একজন পুলিশ সদস্য আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল, এই আপনি এদিকে তাকায় আছেন কেন? আপনার এখানে কী কাজ? এদিকে আসেন। আপনার বাসা কই? এখানে তাকায় আছেন কেন? দেখেন না পুলিশ কাজ করতেছে আর পুলিশের কাজে বাধা দেন কেন? এই রাস্তা ধরে আসছেন কেন?’

‘এমন সব প্রশ্ন শুনে বললাম, আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমার পাল্টা প্রশ্নে তিনি বলতে লাগলেন, তো কীভাবে কথা বলব? কেন, আমি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি না, এখানে কেন দাঁড়ায় আছেন? তার এমন কথা শুনে বললাম, ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে। এবার তিনি ঠিক আছে শুনেই যেন বেশ খেপে গেলেন। সঙ্গে থাকা একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্দেশ দিয়ে বলে উঠলেন, ঠিক আছে মানে! এই ওর কাছে ইয়াবা আছে, ওকে চেক করো। তখন তারা আমার পুরো দেহ তল্লাশি শুরু করল। কিছু না পেয়ে পরে রাস্তায় ইয়াবা খোঁজার অভিনয় শুরু করল। পরে কথা না বাড়িয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছি।’

শুভ্রদেব বলেন, ‘তিনি একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে আমার সাথে বা একজন সাধারণ মানুষের সাথে এমন আরচণ করতে পারেন না। তিনি যা করেছেন, সেটি ছিল ইচ্ছাকৃত। আরেকটু হলে তো তিনি আমাকে ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতেন। তার এমন অপেশাদার আচরণের জন্য শাস্তি দাবি করছি।’

শুভ্রদেব জানান, তিনি বাসায় ফিরে পুরো ঘটনাটি সবুজবাগ থানার ওসিকে (তদন্ত) ফোন করে বলেন। তখন ওসি তাকে বলেন বিষয়টি তারা বুঝতে পারেনি। এ কারণে তার সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। থানায় বিষয়টি জানানোর ঘণ্টা খানেক পরে এসআই সালাউদ্দিনের সঙ্গে থাকা আরেকজন এসআই শংকর তাকে ফোন করেন এবং বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

বিষয়টির ব্যাপারে জানানো হলে মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সবুজবাগ থানার ওসি (তদন্ত) এসআই মফিজুল আলম বলেন, ‘আসলে বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ওই পুলিশ সদস্য বুঝতে পারেননি তিনি একজন সাংবাদিক। আর সে (এসআই সালাউদ্দিন) আমাকে বলেছে তারা তার সাথে তেমন কিছু করেনি। শুধু তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে মাত্র।’

এদিকে পুলিশের অভিযোগ, মোটরসাইকেল তল্লাশির শিকার সেই যুবককে রাস্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে সংকেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি থামেননি। পরে আইন অমান্যের অভিযোগে ওই যুবককে মোটরসাইকেলসহ আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।

Bootstrap Image Preview