Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আমি শিক্ষামন্ত্রী বলছি কেমন আছেন!’ ফোন পেয়ে আপ্লুত শিক্ষক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:১২ PM
আপডেট: ২৪ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:২২ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


ফোন রিসিভ হওয়ার পর তিনি বলেন, 'আমি দীপু মনি বলছি। শিক্ষামন্ত্রী। কেমন আছেন?' এমন ফোন পেয়ে অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কখনো ভাবিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আমাকে কল করবেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না সত্যিই শিক্ষামন্ত্রী আমাকে ফোন করেছেন। তার এই ফোনকল আমার জীবনের সেরা অর্জন। যতই বাধা আসুক, আমি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার এই প্রয়াস চালিয়ে যাবো। ’এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা সাংবাদিকদের জানালেন কুড়িগ্রামের চর শৌলমারি আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির।

আবেগ আপ্লুত এই শিক্ষক বলেন, ‘সরকারের একজন মন্ত্রী এভাবে ফোন করে খোঁজ-খবর নেবেন তা কখনও আশা করিনি। তিনি (মন্ত্রী) আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কুড়িগ্রামের দুগর্ম চরাঞ্চলে নারী শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির যে অবদান রেখে চলেছেন তা নজরে আসার পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার সকাল ৯টায় তাকে স্বাগত জানাতে ফোন করেন। মন্ত্রণালয়ে আসার পথে গাড়িতে বসেই তিনি ফোন করেন অধ্যক্ষ হুমায়ুনকে। ওপাশে ফোন রিসিভ হওয়ার পর তিনি বলেন, 'আমি দীপু মনি বলছি। শিক্ষামন্ত্রী। কেমন আছেন?'

টাকার অভাবে কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে বাধ্য হচ্ছিল কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দুর্গম চর শৌলমারির অধিকাংশ ছাত্রী। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্রের এই দুর্গম চরাঞ্চলে নারী শিক্ষার আলো ছড়াতে দুঃসাহসী উদ্যোগ নেন স্থানীয় যুবক হুমায়ুন কবির। সরকারি অনুদানের তোয়াক্কা না করে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন চর শৌলমারি আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয়। হুমায়ুন নিজেই কলেজের অধ্যক্ষ। দুটি টিনের ঘরে আটটি ক্লাস রুম। ছাত্রীদের কারও বেতন দেওয়ার সামর্থ্য নেই। উল্টো তাদের কিনে দিতে হয় বইপত্র। এমন প্রেক্ষাপটে হুমায়ুনের নেতৃত্বে নয়জন শিক্ষক ও সাতজন কর্মচারী চালাচ্ছেন কলেজের কার্যক্রম। শিক্ষকরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে টিউশনি করে যে টাকা পান; তা ব্যয় করেন কলেজের ছাত্রীদের পেছনে।

নিবেদিতপ্রাণ এই শিক্ষকের সংগ্রামের খবর পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে তাকে সরাসরি ফোন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি হুমায়ুন কবিরকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন।

অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার পর টাকার অভাবে এই চরের মেয়েদের কলেজে যাওয়া হতো না। ঝরেপড়া এই ছাত্রীদের কথা ভেবে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে চরশৌলমারি আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন হুমায়ুন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির একাডেমিক শিক্ষাদানের অনুমতি পেলেও সরকারি অনুদান বা এমপিও পাওয়া যায়নি। শিক্ষকরা টিউশনি করে ছাত্রীদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। এখানে পড়াশোনা করছে ৬০ জন ছাত্রী। তাদের কাছ থেকে বেতন নেওয়া হয় না। পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় সামান্য কিছু টাকা নেয়া হয়। তারপরও ছাত্রীদের বাড়ি থেকে ডেকে এনে ভর্তি করাতে হয়। এর পরও শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। তিনি আরও জানান, ২০০১ খ্রিস্টাব্দে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ইতিহাস বিভাগে ভালো ফল নিয়ে মাস্টার্স করেও চাকরির পেছনে ছোটেননি। নিজ এলাকায় নারী শিক্ষার প্রসারে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হুমায়ুন বলেন, অবহেলিত ছাত্রীদের শতভাগ উপবৃত্তি ও আর্থিক অনুদান দেওয়া হোক। গ্রামে বসে একটা মেয়ে যেন সর্বোচ্চ শিক্ষা নিতে পারে সে জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানে অনার্স, ডিগ্রি এবং মাস্টার্স কোর্স চালুর ব্যাপারেও সংশ্নিষ্টদের সাহায্য চান তিনি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে আবেদনের ভিত্তিতে সরকার অনুদান দেয়া শুরু করে। আবার এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকেই বাছাই করে সরকারিকরণ করা হয়। তবে, সরকারিকরণের পর ওইসব প্রতিষ্ঠানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়। গণহারে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয় বেসরকারি শিক্ষকদের। তাই প্রাথমিকের ন্যায় একযোগে সব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ দাবি করেন শিক্ষক নেতারা।

Bootstrap Image Preview