Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটি বিনিয়োগে নতুন মাত্রা আনবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৩১ PM
আপডেট: ২৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৩১ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডিমর্নিং


চলতি বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় ডেটা সেন্টারের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরেই তা বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

বুধবার বিকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে অবস্থিত জাতীয় ডেটা সেন্টার পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “চীনের সহযোগিতায় প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই হাই টেক পার্কে গড়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টায়ার ফোর ডেটা সেন্টার। ইতোমধ্যে এই ডেটা সেন্টারের ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। “২ লাখ বর্গফুট বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের ভবন নির্মাণ শেষ করে আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডেটা সেন্টারটির টেস্ট অপারেশন চলছে। আশা করা যায়, আগামী এপ্রিলে কমার্শিয়াল অপারেশন শুরু করা যাবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণার পর সরকারি-বেসরকারি খাতের তথ্য সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে ডেটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল বলে জানিয়েছে হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ‘ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার স্থাপন প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যা পরে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

২০১৫ সাল থেকে ২০২০ মেয়াদে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৯৯৫৫.৬৭ লক্ষ টাকা, এর মধ্যে জিওবি ৪০০১৯.৬৭ লাখ টাকা, চীনের প্রকল্প সাহায্য ছিল ১১ ৯৯ ৩৬ লাখ টাকা।

প্রকল্পের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রকল্পটি গত ২০১৬ সালের মে মাসে বাস্তবায়ন করতে শুরু করে হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ৭ একর জায়গা এ প্রকল্পের জন্য স্থান বরাদ্দ করা হয়।

২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং যৌথভাবে ডেটা সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তেুর স্থাপন করেন।

চীনের জেডটিই করপোরেশন জাতীয় ডেটা সেন্টারের ভেন্ডর হিসেবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আপটাইম ইনস্টিটিউট ডেটা সেন্টারের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করে সনদ প্রদান করেছে।

পলক বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশে একটি সমন্বিত ও উন্নত তথ্য সমৃদ্ধ বিশ্বমানের ডেটা সেন্টার নির্মিত হবে, যার ডাউন টাইম হবে শূন্যের কোঠায়। এর মধ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ডিজিটাল কনটেন্ট এক জায়গায় রাখার সুযোগ সৃষ্টি হবে, এতে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক তথ্য আদান প্রদান করা যাবে। ই-সেবার মাধ্যমে উন্নত জনসেবা প্রদান করা যাবে।”

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আধুনিক ডিজিটাল কার্যক্রম, সেবা প্রদান ও ই বিজনেসের মূল ভিত্তি হবে এই ডেটা সেন্টার । এর মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ১৬৮০ কোটির টাকারও বেশি রিটার্ন আসবে বলে ধারণা হয় আমার।”

বুধবার বিকালে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটির বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপারদের নিয়ে পুরো প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন। কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির উপর স্থাপিত বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটি হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রথম প্রকল্প।

হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এ পার্কের প্রয়োজনীয় সকল অফসাইট ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণে কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব মডেলে (পিপিপি) ২টি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৪০ একর জমি প্রদান করা হয়েছে।

হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে প্রথম পর্যায়ে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ৯টি কোম্পানিকে ২০.৫০ একর ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৯টি কোম্পানিকে আরো ২৮ একর প্লট বরাদ্দ করেছে।

হাই টেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান, বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটিতে রবি, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাজডাক টেকনোলজিস প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, “কোম্পানিগুলো সেখানে প্রায় ১৪০.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ও ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।”

এছাড়াও ডাটা সফট, আমরা হোল্ডিংস, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম, ইউ ওয়াই সিস্টেম, এসবি টেলের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভ ফর জবস-শীর্ষক প্রকল্প এখানে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কাজ করবে।

এই কোম্পানিগুলো ও প্রকল্পটি এখানে ১৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি হাই টেক সিটিকে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে জানান  হোসনে আরা বেগম।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “হাই টেক পার্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা তিন বছর ট্যাক্স মওকুফ করে দিচ্ছি। পাশাপাশি স্টার্ট আপদের জন্য আমরা এখানে বিনামূল্যে স্পেস দিচ্ছি যেন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়। বিনিয়োগে নতুন মাত্রা নিয়ে আসবে বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটি।”

হোসনে আরা বেগম পরে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এই পার্ক থেকে আইটি পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। শীঘ্রই এখান থেকে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপও বিভিন্ন হার্ডওয়্যার পণ্যও উৎপাদিত হবে।

Bootstrap Image Preview